অসাধারনের মাঝে সাধারন

জীবন কতোটা সাধারন হয় বা কতোটা অসাধারণ...?? মাঝে মাঝে ভাবি- আমি তো সাধারন একজন, অতিসাধারন। সাধারনের চেয়েও হাজার গুণ সাধারন। হাজার মানুষের মাঝে আমার কোন বিশেষত্ব নেই।  হাজার মানুষ না ধরলাম শত মানুষ ধরলাম তারপর ভাবলাম নাহ্‌ আমার কোন বিশেষত্ব নেই। আর দশ টা পাঁচ টা মানুষের মত আমি অতি সাধারন। নিজের অজান্তেই সিধান্ত নিলাম কিছু একটা করি সাধারন থেকে অসাধারন হতে । হয়তো আমার মত অনেকেই আছে ভিন্ন কিছু করার সাধারন থেকে অসাধারন হতে। তবে আমার বিষয়টি অন্য রকম।

আমি মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে অনেক আতংকে থাকি। কারন, হঠাৎ করে কিছু করে ফেললাম নাতো কোন পরিকল্পনা ছাড়া...!! পরিকল্পনাহীন ভাবে কাজ করলে সে কাজে সফলতা খুব কম আসে, আবার দেখা যায় অনেক বেশি পরিকল্পনা করে রেখেছি কিন্তু সেই কাজটিই করা হয়নি। অনেক সময় দেখা যায় পরিকল্পনা করতে করতেই সময় পার করে দিয়েছি। এবার বলি বিপরীত টা । কথা নেই বার্তা নেই হুট করে ফেলি বড় কোন কাজ । দেখা যায় কিছু ভুল আছে যা একই ভুল বার বার করি এবং প্রতিবার-ই বলি এরপর থেকে আর এমন হবে না কিন্তু তবু হয়ে যায়।

আমার একটা টা বড় দোষ হচ্ছে সহজে, খুব অল্পতে অন্যকে বিশ্বাস করা । সবার সাথে আমি কথা বলি না, বলার ইচ্ছাও হয় না। কিন্তু যার সাথে কথা বলতে একটু ভাল লাগে তাকে বিশ্বাস করে ফেলি সহজেই। তবে এর জন্য ঠকেছি কয়েক বার, যদিও এই ঠকাটা মাত্র দুই - একবার। কারণ হাজার মানুষের সাথে মিশি নি, হাজার মানুষকেও বিশ্বাস করি নি। বিশ্বাস করা মানুষের সংখ্যাও খুব কম, হাতে গোনা কয়েক জন। যখন কেউ বিশ্বাস ভাঙ্গে তা খুব কষ্টে হজম করি কিন্তু কিছুই বলতে পারি না। তারপর থেকে সিধান্ত নেই এরপর থেকে সহজে কাউকে বিশ্বাস করবো না। মোট কথা আমি মানুষ চিনতে পারি না, আবার অনেক সময় বেশি চিনে ফেলি যার ফলে বিশ্বাসটাও একটু বেশিই করি। ফলাফল বিশ্বাস ভাঙ্গা।

যুগের সাথে তাল মেলাতে যেন আমি বেতাল হয়ে যাচ্ছি। যাদের সাথে মিশছি, চলছি তারা যেন সবাই আমার থেকে একধাপ এগিয়ে। আমি যতই তাদের কাছে এগিয়ে যেতে চাই তারা আমাকে ছেড়ে আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। যার ফলে বরাবরই আমি তাদের পিছনে। তাঁরা একটু বেশিই Update.

মাঝে মঝে নিজের মধ্যে অনেক হতাশা কাজ করে। তবুও ভাবি একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। সব চেয়ে খারাপ লাগে তখন যখন নিকট কেউ আমাকে অবহেলা করে, আমার বিশ্বাসটা ভাঙ্গে। পরে চিন্তা করে দেখি আসলে দোষ টা আমারই। সবাই সবার স্বার্থ দেখবে নিজেকে নিয়ে ভাববে এটাই তো স্বাভাবিক এর জন্য মন খারাপ করার কী আছে ...!! কিন্তু নিজের মনকে এটা বোঝাতে বরাবরের মতোই ব্যর্থ। তবে আফসোস লাগে আমি কেন পারি না তাদের মতো হতে।

যখন নিঃশ্চুপ, নিরিবিলী, নির্জন অন্ধকারে একা থাকি তখন মনে হয় দুনিয়াতে আমার মত সুখি আর কেউ নেই। এতো সুখ কৈ রাখবো এই চিন্তা করতে করতেই অসুখি হয়ে যাই। সুখি কি হতেই হবে...!!! সুখ Share-করার জন্যও তো একজন মানুষ প্রয়োজন, দুঃখ না'হয় নাই Share-করলাম। কৈ আমার চার পাশে অন্ধকারের ভিড়ে কাউকেই পেলাম না সুখ ভাগাভাগির জন্য। দুঃখের পাশে কেউ থাকতে চায় না, কেউ থাকে না। দুঃখ এমন একটা বিষাক্ত নাম যার নাম শুনলেই কাছের মানুষও দূরে চলে যায়।

জন্ম নিয়েছি তাই মৃত্যু অনিবার্য।  আমি যখন থাকবো না এই পৃথিবীতে তখন হয়তো আমার এই লেখা গুলো থাকবে। কেউ দেখবে, পড়বে বা কেউই পড়বে না। শুধু শুধুই থেকে যাবে বা নষ্ট হয়ে যাবে এটাও অনিশ্চিত। কিছু দিন আমাকে আমার নিকট আত্নীয়রা মনে রাখবে কিন্তু একটা সময় ঠিক-ই ভুলে যাবে কারন, এটাই তো স্বাভাবিক। যে বন্ধুটি আমার সব চেয়ে কাছের, যে মানুষটা আমাকে পাওয়ার জন্য সব করতে রাজি সেই মানুষটাও আজ আমি মারা গেলে কাল মনে রাখবে না। আমার জন্য তাদের জীবন থেমে থাকবে না। আমার শূন্যস্থান অন্য কেউ এসে পূরণ করবে অথবা তারাই আমার শূন্যস্থানটা অন্য কাউকে দিয়ে পূরণ করিয়ে নিবে। আমাকে মনে রাখবে না কেউই, আমাকে মনেও পরবে না কারো। কারন, আমি কোন অসাধারন কেউ নই।  মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় অসাধরন কেউ হয়ে যাই আবার ভাবি না সাধারন থাকাই ভালো...।।