পৃথিবীতে কেউই পারফেক্ট নয়। নদীর ওপারের ঘাস বেশি সবুজ এটা ভাবার কোনো কারন নেই। মানুষের হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান হয় না, তেমনই প্রতিটা মানুষ, মানুষের ধরণ, মানুষের মন এক নয়। 
কেউ কেউ নিজের ভাললাগা, খারাপ লাগা, কষ্ট গুলো খুব সহজেই হর-হর করে বলে দিতে পারে। নিজের কষ্টের কথা অনেক উপায়ে, অনেক অঙ্গ-ভঙ্গীতে প্রকাশ করতে পারে। আবার অনেকেই আছে যারা হাজার কষ্ট পেলেও মুখ ফুটে বলতে পারে না, বলতে পারে না যে সে কতোটা কষ্ট পেয়েছে, মনে কতোটা আঘাত লেগেছে। তবে সেও কষ্ট পায় অনেক বেশি কষ্ট পায় কিন্তু সে কখনোই চায় না যে তাকে কষ্ট দিলো, যার কারণে কষ্ট পেলো তাকে বুঝতে দিতে, জানতে দিতে। কষ্ট পাওয়ার পর সে চুপ হয়ে যায়, একদম চুপ, স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বাহিরে কিছুই প্রকাশ পায় না, কখনো পাবেও না। শুধু তার মন-ই জানে কতোটা কষ্ট, আঘাত সে পেয়েছে। 
কষ্টের কথা প্রকাশ করে কি হবে যদি সে নাই বোঝে যে তার কথার জন্য, তার ব্যবহারে সে এতোটা কষ্ট পেয়েছে। 
আমাদের মাঝে চিন্তা ভাবনায় একটু ভুল আছে। যারা খুব সহজে মনের কথা, নিজের কথা, নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ করতে পারে আমরা তাদের ভাবি তাঁরাই একমাত্র Emotional-, তাদেরই একমাত্র মন আছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আসলেই কি তাই...?? এমনো তো হতে পারে সে Acting-করছে, এমনো তো হতে পারে সে Just-আপনাকে দেখানোর জন্য কাজ গুলো করছে। আসলে মানুষ যা প্রকাশ করে সেটাকেই আমরা বেশি গুরত্ব দেই, আসল সত্যটা কি সেটা খুব কমই লক্ষ্য করি। সে বাহিরে যা প্রকাশ করছে আর তার মনে কি আছে এই দু'টো জিনিস খুব কমই মিলানোর চেষ্টা করি। 

"আমি তাদের দলে যারা প্রকাশ করতে পারে না বা জানে  না...।।"

প্রকাশ করাটাই কি সব...!!?? যে মানুষটা প্রকাশ করতে পারলো না তার কি মন নেই...?? তার কি কষ্ট হয় না...?? তার কি কান্না পায় না...?? নাকি সে মানুষই না...?? তার মনও আছে, কষ্টও হয়, কান্নাও পায় কিন্তু সে তা সবার সামনে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না। এমনকি যে মানুষটা তাকে কষ্ট দিলো, কথা শুনালো তার সামনেও না। 
একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন আপনি একটু আগে যে কথাটা এই মানুষটাকে বললেন বা যে ব্যবহারটা করলেন তার জন্য হয়তো সে কান্না করেছে যা আপনি দেখেন নি বা সে আপনাকে দেখাতে চায়নি। শুধু এ জন্য যে আপনিও হয়তো কষ্ট পাবেন, আপনারও হয়তো মন খারাপ হয়ে যাবে। একটু পর সেই মানুষটাই যখন আপনার সামনে এসে হাঁসি মুখে কথা বললো আর আপনি ভেবে নিলেন যে তার কিছুই হয় নি, কষ্টও লাগেনি !!! এই ভাবনাটাই সব চেয়ে বড় ভুল। আপনি যদি সত্যি বোঝার চেষ্টা করতেন যে সে কষ্ট পেয়েছে কিনা বা কতোটা কষ্ট পেয়েছে তাহলে একটু লক্ষ করলেই দেখতে পেতেন তার গলার স্বর ভেজা, তার চোখের দিকে একটু তাকালেই বুঝতে পারবেন তার চোখ লাল, চোখ দু'টো ভেজা, সে আপনার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারচ্ছে না। আপনার সামনে এসে হাসি মুখে কথা বলার আড়ালে তার কান্নাটা আপনার চোখ দেখলো না। এই মানুষ গুলোর হাসির আড়ালে যে কতো কষ্ট লুকায়িত থাকে তা আপনি বুঝতে পারবেন না বা বোঝার চেষ্টাও করবেন না কখনো। এই মানুষ গুলো বাহিরে যতোটাই কঠিন দেখাক না কেন, ভিতরে খুবই নরম, খুব বেশিই কোমল। তাদের মনে আঘাত পেলেও তাঁরা হাঁসি মুখে কথা বলতে জানে। এই মানুষ গুলো জানে কিভাবে কষ্ট লুকোতে হয়, নিজেকে আড়াল করতে হয়, এই মানুষ গুলোর কষ্ট সহনীয় ক্ষমতা অনেক বেশি।
এই মানুষ গুলোই সবার চোখে  Hard Type,  Emotional Less-মানুষ হিসেবে সু-পরিচিত থাকে। কেউ জানে না তাদের মনে কতোটা Emotion-রয়েছে। আবেগ সব সময় প্রকাশ করা যায় না বা পায় না। এই মানুষটা হয়তো এটা ভাবে যে কেউ একজন তার না বলা কথা, অপ্রকাশিত চোখের ভাষা বুঝবে... 






চেনা মানুষ অচেনা হওয়াটা যতোটা'না স্বাভাবিক তার চেয়ে বেশি অস্বাভাবিক লাগে আমার কাছে। প্রতিদিন আমি একটু একটু করে মানুষ চিনি, আর অল্প অল্প করে বড় হই। আজব এ শহরে মানুষের যে কত রূপ, কত রঙ্গ যে জানে সেই মানুষ গুলো...!!

অনেক দিনের চেনা মানুষ টিকেও হঠাৎ কেমন যেন অচেনা লাগে, তার কথায়-ব্যবহারে টাকে চেনা যায় না । আবার অল্প ক'দিনের পরিচিত মানুষটিও কেমন মুহূর্তেই আপন করে নেয়, আপন হয়ে যায়। বিপদে যার এগিয়ে আসার কথা সবার আগে, তাঁকে অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না আশেপাশে। যাকে কখনোই আশা করেন নি, তাঁকেই হয়তো পেয়ে যেতে পারেন কষ্টের দিনে। সেই আপনার চোখের জ্বল মুছে দিবে, কষ্টে পাশে থাকবে, মুখে হাঁসি ফোঁটাবে আর যদি কাউকে না পান, দেখবেন নিজের মাঝেই অন্য এক আমির অস্তিত্ব টের পাবেন। এই আমিত্বটা স্রষ্টার দান। যার কেউ নেই, তাঁর জন্যও মনে হয় কেউ একজন থাকেন। কিন্তু আমরা তা বুঝি না, আমরা তা অনুভব করতে পারি না। কেউ একজন আছেন, কেউ একজন থাকবেই।

কেউ কেউ মানুষকে কষ্ট দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পায়। বিপদে হাত না ধরে কষ্ট দিতেই যেন পছন্দ করে, কষ্টে পাশে না দাঁড়িয়ে দূর থেকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অনেক ক্ষতি করার পরেও যখন সে দেখে, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষটি তারপরেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন সে ঈর্ষান্বিত হয়। নিরীহ মানুষটির সাময়িক কষ্ট হয়, কিন্তু একদিন সে-ই কিন্তু জয়ী হয়। একটা সময় সেই কিন্তু সব চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়, মনের দিক থেকে একটা সময় সব চেয়ে কঠিন হয়। এতো বেশি কঠিন যে পাথরকেও যেন হার মানায়।

যে মানুষটা একটা সময় একটুতেই কষ্ট পেতো, একটুতেই চোখে জল গড়িয়ে পড়তো সেই মানুষটা হোঁচট খেতে খেতে উঠে দাঁড়ায়, কষ্টকে বস্তা বন্ধী করে পাথর করে মনে রেখে দেয়। পাথরও হয়তো একটা সময় ভাঙ্গে, গলে যায় কিন্তু এই মানুষটার মন গলে না। কারণ এই মনটা কষ্টে লালিত, নিঃসঙ্গতার চাদরে পালিত, মিথ্যা কথায় মন ভাঙ্গনের সুতোয় গড়া...।।

এই মনটা কি এতোটা পাথর হতো যদি চেনা মানুষ চেনাই থাকতো...!!?? যদি হাতটা কেউ বাড়াতো, যদি কষ্টের মাঝে, একা থাকার মাঝে একটু কেউ ভরসা দিতো, কেউ একজন সঙ্গী হতো পথ চলার...!!

একা চলা কষ্টের কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা শত বাধা অতিক্রম করে একা একাই ছুটে চলে। হয়তো আপনার আশেপাশেই আছে সে। আপনিই হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে তাকে আঘাত করেছেন, হয়তো তার পাশে না দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখেছেন। হয়তো আপনিও কোনো সময় তার কষ্টে হেসেছেন, সে ভালো করলেও উৎসাহ না দিয়ে আড়ালে হেসেছেন। তার দুঃখে কষ্ট না পেয়ে হেসেছেন, মজা নিয়েছেন।

এই অদম্য মানুষ গুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশ হয়ে পড়ে কিন্তু কখনোই হাল ছাড়ে না। জীবন যুদ্ধে এরা খুবই বাস্তবতাবাদী, সাহসী, কর্মঠ। পরাজিত এরা কখনোই মেনে নিতে পারে না। কিন্তু কিছু সময় এরা হতাশ হয়ে পড়ে, একা একা বোধ করে, নিঃসঙ্গতা ঘিয়ে ধরে। কারণ, এদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। কোন একটা সময় তাঁরা কারো সঙ্গ চায়, তার হাতে একটা হাতের স্পর্শ চায়, সেই হাতের সাহস চায়। কেউ পাশে আসে না, কেউ হাত ধরে সাহস দেয় না, কেউ এসে হাতটি ধরে কিছুদূর এগিয়ে দেয় না। একটিবার জানতে চায় না, সে এইবেলা খেয়েছে কিনা, তার আজ মন খারাপ কেন, তার মনের ইচ্ছা গুলো কি, মনের নীরব কষ্ট গুলো কি...!!? তার হাসিমুখের আড়ালে নিরব কান্নার জল কেউ দেখে না। তার একাকীত্বতা, নিঃসঙ্গতা কারো চোখে পড়ে না।।

আমি এই মানুষটির দলে। আমি জানি, এর কতো কষ্ট মনে।


MARI themes

Powered by Blogger.