একজনকে হুট করে ভালোবাসি বলে ফেললাম আর সব জয় করে ফেললাম; বিষয়টি মোটেই এমন নয়। ভালো তো অনেকেই বাসতে পারে কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারে ক'জন।। ভালোবাসা আর তার সাথেই সারা জীবন থাকা এক জিনিস নয়। একজন নেশাগ্রস্থ মাতাল ব্যাক্তিকে জিঙ্গেস করে দেখুন সে-ও ভালোবাসে। সে ভালোবাসে তার নেশার বস্তুকে কিংবা নেশার টাকা জোগান দেওয়া মানুষটাকে। নেশার ঘোর কেটে গেলে তার ভালোবাসার সুতাও কেটে যায়। মনোবিজ্ঞান বলেন- "যখন আমরা ভালোবাসা নামক নেশার মধ্যে আবদ্ধ থাকি তখন মনের ভেতর এক ধরনের উন্মাদনা কাজ করে। নেশায় ডুবন্ত দু'জন মানুষ যেন স্বপ্ন রাজ্যে ভেসে বেড়ায়। আচ্ছন্নতা গ্রাস করে তাদের সব চাওয়া পাওয়ার মাঝে, একই চিন্তা বারবার মনের মধ্যে জেগে ওঠে।  একই মুখ বার বার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে, একই উদ্বেগ ও অনুভূতি মনের ভেতর ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে থাকে"। এটাই ভালোবাসার ক্রিয়া, এটাই ভালোবাসা।।

মূলত ভালোবাসা হচ্ছে এক ধরনের Positive Emotion যার বাংলা অর্থ আবেগ। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ'ই আবেগ প্রবন, কেউ কম আর কেউ বেশি।। তাই প্রেমের শুরুতে মানুষ সব কিছু আবেগ দিয়েই চিন্তা করে; বাস্তবতার ভাবনা খুব কম মানুষই ভাবে। ভালোবাসা শুরুটা হয় আবেগ দিয়ে, আর শেষ এর দিকে আসে বিবেগ। দীর্ঘদিন পরে আবেগটা যখন চলে যায় বিবেক তখন জেগে ওঠে। একটা সময় যে মানুষটার কথা, স্পর্শ-তাকানোর ভঙ্গিমা, চাহনি শরীরের স্নায়ুকে যেভাবে নাড়া দিত, স্পন্দিত করতো একটা সময় কিন্তু সেই প্রবল তৃষ্ণা'টা, ইচ্ছাটা আর জাগাতে পারেনা, জাগে না মনে। সময়ের পরিবর্তনে আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার মাত্রা আস্তে আস্তে হ্রাস পায়, কমে যায়।। ভালোবাসার সেই উত্তাল জোয়ারে তখন চলে আসে ভাটির টান। ভেতরে জনম জনমের ভালোবাসার বিশ্বাস থাকলেও এর বাহিরের তীব্রতা যে কমে গেছে টের পায়না কেউই...।।

ভালোবাসা একটা সময় দিনের পর দিন যখন কমতে থাকে তখন বুঝতে হবে সেটা ভালোবাসা না। ভালোবাসা কমে না। আমি যদি ভালবাসাকে সযত্নে মনে লালন করি, মনে জায়গা দেই সেটা দিন দিন বাড়বেই। কমবে না, কখনোই না।। দিনের পর দিন তার গভীরতা, তীব্রতা বাড়তেই থাকবে। এই গভীরতা, তীব্রতা বাড়াটা আপনি একটা সময় নিজেই বুঝতে পারবেন। একটা সময় বুঝতে পারবেন সে আপনার জন্য কি, আপনি তার জীবনের জন্য কি...।। ভালোবাসা মাপা যায় না কিন্তু এর গভীরতা, তীব্রতা বোঝা যায়।

এজন্য সম্পর্কের শুরুতে মনে করা উচিত আপনি একজন মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেননি; করেছেন একটি গোলাপের চারা রোপন। এই চারাটিই হলো আপনার ভালোবাসার মানুষটির মন। চারাটি বড় করতে হবে; ফুল ফোটাতে হবে।। আর এ জন্য দরকার সঠিক পরিচর্যা। কারন সঠিক পরিচর্যাই বিকাশিত করতে পারে প্রয়োজনীয় ডালপালা ও ফুল-ফল।। মনের পরিচর্যা, সম্পর্কের দিক ঠিক এমনই। কেয়ারিং-শেয়ারিং, সময় দেয়া, চাওয়া-পাওয়ার, ইচ্ছা, ভাললাগা-খারাপ লাগা গুলো মাথায় রেখে যথেষ্ট মূল্য দেওয়া।। মন এভাবেই বিকশিত হয়, ভালোবাসা এভাবেই গভীরতা পায়। বিশ্বাস থাকতে হবে মনের উপর, বিশ্বাস থাকতে হবে ভালোবাসার উপর, আস্থা রাখতে হবে মানুষটির উপর। তাকে যতোটা পাওয়ার ইচ্ছা থাকতে হবে, তাকে হারানোর ভয়টাও মনে ততোটাই থাকতে হবে। সময় গড়িয়ে যায়, বয়স বাড়তে থাকে তবু ভালোবাসা হারায় না, কিন্তু গভীরতা ঠিকই বাড়তে থাকে।।

“বন্ধুত্ব” নামটার মাঝেই আত্মার একটা সম্পর্ক জড়িত। বন্ধুত্ব নিয়ে লিখতে বসলে লিখে শেষ করা যাবে না, আবার এক লাইনেই শেষ দেওয়া যায়।
পৃথিবীতে সবার উপরে বাবা-মা। যাদের সাথে অন্য কারো তুলনা হয় না, তাঁরা অতুলনীয়। বাবা-মা যখন কোন কারণে ধমক বা বকা দেয় তখন আমাদের মনের দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করার জন্য কার কাছে যাই...?? মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য প্রথমেই আমরা যাই আমাদের খুব কাছের, আপন প্রিয় বন্ধুটির কাছে। আমরা কিন্তু ভাই- বোন এর কাছে যাই না, যাই সেই বন্ধুটির কাছেই যার কাছে মনের সব কথা, মনের সব কষ্ট, সব ইচ্ছা নিঃদ্বিধায় প্রকাশ করতে পারি। যার কাছে মনে কষ্ট গুলো বলে নিজেকে হালকা করা যায়। এই প্রিয় Best Friend- এর কাছে কিছু বলতে আমাদের কোন সঙ্কোজ হয় না, বাঁধা আসে না কিন্তু কেন হয় না তা কি একবার ভেবে দেখেছেন…?? এই মানুষটাকে আমরা এতোটাই বেশি বিশ্বাস করি, আস্থা রাখি যে তাদের কাছে নিজের সব কিছু Share- করতে দুইবার ভাবতে হয় না।

Best Friend-এর কাছে কেউ কখনো কিছু লুকোয় না। সেটা যে বিষয়েই হোক না কেন, যাই হোক না কেন। ভালো – খারাপ যাই হোক না কেন তার কাছে বলার আগ পযন্ত আপনার পেটের ভাত হজম-ই হবে না, না বলে থাকতেই পারবেন না। আপনার মনে যদি এই ধারনা থাকে যে এই কথাটি বললে হয়তো আমাকে খারাপ ভাববে বা বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে বা অন্য কিছু ভাববে। তাহলে আমি নিঃদ্বিধায় বলতে পারি তাকে আপনি Best Friend-ভাবেন না, আপনাদের মাঝে বন্ধুত্বটা এখনো হয়নি। আর সে আপনার সব জেনেও যদি আপনার পাশেই থাকে, আপনাকে সঠিক পথে আনে বা ভালো কিছু করার উৎসাহ দেয় তাহলে সেই আপনার Best Friend।

Best Friend-এমন একটা সম্পর্ক যার সাথে থাকলে, যে পাশে থাকলে সব কিছুই নিজের মনে হয়, মনের মাঝে এক ধরনের সাহস সঞ্চয় হয়, যে কোন অসাধ্য কাজ করার দুঃসাহস মনে সঞ্চয় হয়।।
আমরা একমাত্র বন্ধুর কাছেই আমাদের গোপন সব কথা, সব কিছু বলে থাকি। তার প্রতি এতোটা আস্থা আছে বিধায়ই কিন্তু বলে থাকি। তাকে আমরা বিশ্বাস করি, সেও কিন্তু আপনার এই গোপন কথা তার নিজের মাঝেই রেখে দেয়। কারণ সেও জানে তাকে আপনি কতোটা আপন ভাবেন, কতোটা বিশ্বাস করেন আর কতোটা আস্থা রেখে তাকে আপনার মনের কথা গুলো বলেছেন। আমরা কখন কি করি, না করি সবই সেই বন্ধুটি জানে। কারণ, আপনি যদি সত্যি তাকে Best Friend-  ভেবে থাকেন তাহলে তাকে না জানিয়ে কিছু করতেই যাবেন না, না জানিয়ে কিছু করার কথা ভাবতেই পারবেন না।

তাই বলে এই না যে তাদের সাথে আমাদের কথা কাটাকাটি হয় না, ঝগড়া হয় না। কিন্তু সেই ঝগড়া, কথা-কাটাকাটি খুবই ক্ষণিকের জন্য, খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই সীমাবধ্য থাকে। আত্না ভালো না থাকলে জীবন চলবে কিভাবে। তাইতো আত্না ভালো রাখতে সব ঝগড়া এমনিতেই মিলমিশ হয়ে যায়।

যখন আপনার মনে হবে এই কথা, এই কাজের কথা বন্ধুকে বললে বা জানতে পারলে আপনি ছোট হবেন, আপনার সন্মান কমে যাবে তাহলে ধরে নিন তাকে কখনো আপনি আপন কেউ ভাবেন নি, বন্ধু ভাবেন নি।।

বন্ধুত্ব হবে স্বচ্ছ কাচের মতো, যার এক পাশ থেকে অপর পাশ দেখতে পাবেন।
বন্ধু অনেক থাকে, কিন্তু বুকে জড়িয়ে কাঁদার মত বন্ধু এক জনই থাকে। সেই আপনার আপন একজন, সেই আপনার বন্ধু; আত্মার বন্ধু।
বন্ধুত্ব কি তা তখনই বুঝবেন যখন হারিয়ে ফেলবেন। তাকে হারিয়ে ফেলবেন না, তাকে হারালেন মানে জীবন থেকে অনেক বড় কিছু হারালেন।

ভালোবাসা= ভালো + বাসা। না, ভালো একটি বাসার নাম ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা নিয়ে খুব কমই ধারনা রয়েছে, তবে একেবারেই যে নেই তা কিন্তু নয়। আমার এই ছোট্ট ধারনা টুকু আমার আশেপাশের মানুষের সাথে খুব কমই মিলে। হ্যাঁ, সবার চিন্তা ভাবনা এক নয়। কিন্তু আমি মনে করি ভালোবাসার ক্ষেত্রে চিন্তা ভাবনার মিল খুব বেশি জরুরী। যদিও এই একই বিষয় নিয়ে আরো একটি ব্লগে লিখেছি।

Actually- ভালোবাসা আর প্রেম এক নয়। অনেকেই এই ভালোবাসা আর প্রেমকে একত্রে মিলিয়ে ফেলে। অনেকে মনে করে ভালোবাসার আরেক নাম প্রেম, কিন্তু না। কখনোই না…।। আর এ জন্যই ভালোবাসা নিয়ে চিন্তা ভাবনা একেক জনের কাছে একেক রকম।

আমার কাছে ভালোবাসা আর প্রেম এর সংজ্ঞা আলাদা। যদিও এই সংজ্ঞা আমার নিজের ব্যাক্তিগত ভাবে দেওয়া। আমি এই বিষয় নিয়ে কারো সাথে মত বিরোধীতা করতে চাই না।

প্রেম কি...?? ধরুন একটা ছেলে/মেয়ে একই সাথে ৪-৫ জন মেয়ের/ছেলের সাথে একই ধরনের কথা বলতেছে। মানে ভাললাগা, ভালোবাসা এই ধরনের। একই এসএমএস, একই কথা সবাইকেই বলতেছে, সবার জন্য একই অনুভূতি। এটা ভালোবাসা না, এটা Time Pass, এটাই প্রেম। ধরুন, আপনি একজন মেয়ে / ছেলেকে ভালোবাসি বললেন। সে আপনাকে “না” করে দিলো। আপনি মনে মনে ভাবলেন আরে ব্যাপার না- একটা গেলে দশটা আসবে। যখন আপনার মনে এই ধরনের ভাবনা, চিন্তা আসবে তখন আপনি ধরেই নিতে পারেন এটা প্রেম। ভালোবাসা দশটা আসে না।


ভালোবাসা হয় একটু ভিন্ন, একটু আলাদা। যেখানে থাকে মনের ছোট ছোট ইচ্ছা, আশা, ভালোলাগা, আবেগ সব কিছু। একজন মানুষকে নিয়েই সারাক্ষণ ভাবা, তাকেই নিয়ে স্বপ্ন বোনা, মনের মাঝে তার ছবি আকা, তার ভাললাগা – খারাপ লাগা সব কিছু নিজের মনে গেঁথে নেওয়া। ভালোবাসা এমন যা কখনো শেষ হয় না। মেয়েটি বা ছেলেটি না করে দিলো আর ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো…!!! ভালোবাসা মোটেই এমন নয়।। সে আপনাকে না করে দিলো আর আপনি আরেক জনকে ভালোবাসি বললেন তাহলে আগের জনকে কি ভালবাসলেন…??? সে না করে দিলো কিন্তু আপনি তাকেই ভালবেসে গেলেন, তার পথ চেয়েই বসে রইলেন, তার অপেক্ষাতেই রইলেন। তাকে হাজার ভাবে, হাজার উপায়ে বুঝাতে চেষ্টা করলেন তাকে আপনি কতোটা ভালোবাসেন এটার নামই ভালোবাসা।।

ভালোবাসাটা একদিনে হুট করে হয় না। অনেক দিন সময় লাগে। একদিন - দুইদিন, একমাস-দুই মাস নয়…!! কয়েক মাস, এমনকি বছরও লাগতে পারে। তখন আপনার অনুভুতিই আপনাকে বলে দিবে আপনি তাকে ভালবাসেন। আপনার চোখে, মুখেই ফুটে উঠবে তার প্রতি ভালোবাসা। তখন আপনার মাথায় আর অন্য কোন চিন্তা, অন্য কোন ভাবনা আসবেই না। অন্য যাই ভাবতে যান না কেন তার কথাই মনে পরবে। উঠতে, বসতে, ঘুমোতে, পড়তে বসেন আর যাই করুন না কেন তার মুখটাই ফুটে উঠবে আপনার চোখের সামনে। তখন আপনি নিজের অজানতেই বলবেন যে তাকে আপনি ভালোবাসেন, শুধু ভালোবাসেন বললে ভুল হবে; অনেক গভীর ভাবে ভালোবাসেন।।

ভালোবাসা এমন একটি জিনিস যা যখন আসে তখন আপনার মনে, অন্তরে, রক্ত মাংসে মিশে যাবে। বিন্দু পরিমাণ একটু ভাললাগা থেকে কখন যে এতো ভালবেসে ফেলেছেন বুঝতেই পারবেন না।
ভালোবাসার সব চেয়ে বড় দিকটি হলো আপনি তার জন্য কত দিন অপেক্ষা করতে পারলেন। আপনার ভালোবাসা যতোটা গভীর হবে আপনার অপেক্ষায় থাকার কষ্টটা ততোটাই কম হবে।

যদি ভেবে থাকেন যে গাছ লাগালেন আজ আর কাল-ই ফল পেয়ে যাবেন তাহলে আপনার চিন্তাভাবনা ভুল। ভালোবাসেন এটা আপনার মনের মাঝে গাঁথতে হবে, শুধু নিজের মাঝে রাখলেই চলবে না; যাকে ভালোবাসেন তার কাছেও প্রকাশ করতে হবে। আর আপনার এই প্রকাশ করাটা যে সরাসরি বলতেই হবে এমন কিন্তু নয়। ভালোবাসা এমনিতেই প্রকাশ পাবে আপনার কথায়, আপনার ব্যাবহারে, আপনার প্রতিটা পলকে। ভালোবাসা প্রকাশ পাবে তার প্রতি আপনার সন্মানবোধ থেকে, তাকে আপনি কতোটা Importance- দেন তার উপর। আপনি তাকে কতোটা ভালোবাসেন তার উপর-ই নির্ভর করবে আপনি তার ভালোবাসা পাবেন কিনা, তার মনে জায়গা নিতে পারবেন না।

“ভালোবাসা, প্রেম নয়। ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা।”

MARI themes

Powered by Blogger.