বিলাসিতা আর দুঃখ বিলাস এক নয়। অনেকটা গানের কথার মতো-"মনটা যদি না থাকতো আমার কিছুই মনে পড়তো না, এই মন তবে এমন করে কেমন কেমন করতো না- আর তাকেও মনে পড়তো না ।" আমার যখন বিষণ মন খারাপ হয়, হাজার মাইল দূরে থাকা মানুষটির দরজায় গিয়ে আনমনে কড়া নাড়ি। মানুষটা খুব বেশি ভালো- দরজা খুলে আমাকে আশ্রয় দিতো তার কাছে নিতো প্রতিনিয়ত। আমার বুকের ভেতর যখন বোকা সোঁকা কষ্ট গুলো চেপে বসতো আনমনেই, আমার অবচেতন মনের তখন ইচ্ছে হতো- এই ভারটা একটু হালকা করা দরকার। আমি মানুষটাকে চোখ বুঝে ডাকতাম। চোখ বন্ধ করে যখন তাকে দেখতাম, কষ্ট গুলো কিভাবে যেন হালকা হয়ে যেতো চোখের পলকেই।

এই বিশাল পৃথিবীতে যখন নিজেকে খুব একলা লাগতো, চোখ বুজে মানুষটার সামনে চলে যেতাম। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মানুষটা বুঝে নিতো। মানুষটা চোখে চোখ রেখে বলতো, "আরেহ আমি আছি না...?" তখন আমার আর একলা লাগতো না। সুখি সুখি একটা অনুভূতি হতো।

মাঝরাতে প্রায়শই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে কেমন যেন একটা অস্থির রকমের "কোথাও কেউ নেই" নামক অনুভূতি জেগে উঠে। এই অনুভূতিটা খুব কষ্ট দেয়, আমাকে ঘুমাতে দেয় না। চোখ বন্ধ করলেই এই মানুষটা তখন 'প্লিজ ঘুম হয়ে যাও চোখে' আর ঘুম হয়ে আসতো আমার মন খারাপের রাতে। আর আমিও ঘুমিয়ে পড়তাম অস্থিরতা থেকে।।

সারা দিনে একলা পথ চলতে চলতে সারাদিনের জমে থাকা গল্প গুলো বলার জন্য একজন মানুষকে খুব দরকার হতো। আমি মানুষটিকে ডাকতাম। মানুষটা আমার হাত ধরে আমার পাশে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার সব অর্থহীন, মূল্যহীন গল্প গুলো ক্লান্তিহীন ভাবে শুনতো। আমার হাসিতে হাসতো খুব, আর কান্নার রঙটা বুঝতো নিমিষেই।। 

আমার কখনোই কোন কিছুর নেশা ছিল না, এখনো নেই। কিন্তু আস্তে আস্তে কিভাবে যেন মানুষটার নেশা হয়ে গেলো আমার। খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারচ্ছিলাম মানুষটার প্রতি আমি কিভাবে যেন নেশাগ্রস্ত হয়ে গেলাম। দিন দিন এই নেশা তীব্র থেকে  তীব্রতর আকার ধারণ করলো। কতটা তীব্র সেটা আমি আগে বুঝতে পারি নি তবে এতোটা বুঝতে পারতাম তীব্রতার মাত্রা গভীর... একদিন টের পেলাম খুব ভালোভাবে...

কোন এক শীতের সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমি আবিষ্কার করলাম, কি যেন আর আগের মত নেই। আমি পাগলের মতো হয়ে যেতে লাগলাম কিন্তু কিছুই খুঁজে পেলাম না। আমি পাগলের মত মানুষটিকে ডাকলাম, কিন্তু মানুষটা আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। অনেকটা এমন সে আমার ডাক শুনছে না। আমার প্রশ্নের জবাব তাচ্ছিল ভাবে দিয়ে সে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। নিজের মাঝে আমার ছোট ছোট গল্প গুলো জমতে থাকলো। বুকটা আসতে আসতে ভারী হতে লাগলো। বুকের ভেতর এত এত বোকাবোকা কষ্ট অপেক্ষা করতো মানুষটার জন্য। মানুষটা আর আগের মত এসে পাশে বসে গল্প শুনছে না...মন খারাপের রাতে মানুষটা 'ভিনদেশী তারা' হয়ে আমার আকাশে জ্বলতে থাকে। সে আমার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। তাকে আর ছুঁতে পারি না, একদম না...।।

বুঝতে পারলাম মানুষটি ছিল আমার কল্পনা। বাস্তবের সাথে যার কিছুই মিল নেই। মানুষের মন পৃথিবীর সবচেয়ে বিচিত্র জিনিস। ভালোলাগা নিমেষেই তৈরি হয়, ভালোলাগা নিমেষেই চলে যায়।

আমার মনে জমে থাকা ছোট ছোট গল্প, বুকের ভেতর চেপে থাকা ভারী ভারী কষ্ট, আমার নিঃঘুম রাতের ঘুম ভাঙ্গা সকালের অবচেতন মন, ভীড়ের মাঝে ফুটপাতের প্রতিটি পায়ের পদক্ষেপ, সারাদিনের এলোমেলো কাজের ফাকে বা কফির মগে চুমুকে মনে পড়ে যাওয়া মানুষটার অস্তিত্বের স্মৃতির কথা। ওরা তো বুঝে না এটা বাস্তব না, এটা কল্পনা ছিল। ওরা খুঁজতে থাকে সেই মানুষটাকে... ওরা প্রশ্ন করে, "কেন বাস্তব নয় এগুলো...?"

আমি এই কেন এর উত্তর খুঁজে পাইনি, আমার কাছে এই 'কেন?' এর উত্তর নেই। আমি জানি না আমার কল্পনা কেন আমার বাস্তবতার মতো নয়। আমি শুধু জানি,  আমার কল্পনাটা ভুল ছিল। ভুল কল্পনায় আমি মানুষটির কাঁধে আশ্রয় চেয়েছিলাম, ভুল কল্পনায় মানুষটির আঙ্গুলের ফাঁকে অধিকার খুঁজেছিলাম। কল্পনায় যে মানুষটার সাথে থাকার নেশা একসময় খুব ভরসা দিতো, সেই অভ্যাসই একসময় তীব্র কষ্ট দেয়। সেই কষ্ট থেকে বের হওয়া খুব কঠিন, সেই তিব্র নেশা থেকে চাইলেই বের হওয়া যায় না...

ভালোবাসা হঠাৎ করে হলেও ভালোবাসার পর সব কিছু হুট করে হয়ে উঠে না। শুরুর দিকে সব কিছু মধুর মতো লাগলেও আসতে আসতে সেটা তিক্ততায় পরিণত হয় নিজেদের কিছু ভুলের কারণে। আমরা কেউই সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা চাই না কিন্তু তিক্ততা চলেই আসে। আর এই তিক্ততা আসে একে অপরকে ভুল বুঝার কারণে, বুঝতে না পারার কারনে। আমরা ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে একটুও বুঝার চেষ্টা করি কি...?  তিক্ততা এখান থেকেই শুরু হয়, আসতে আসতে তিক্ততা বাড়তে বাড়তে সম্পর্কের বিচ্ছেদর দিকে চলে যায় কিন্তু আমরা কখনোই চাই না কোন সম্পর্কের বিচ্ছেদ হোক। আমরা অনেক কিছুই চাই না কিন্তু সেটাই ঘটে যায়।

সম্পর্কের আগে এবং সম্পর্কের পরের সময়টা অনেক বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন, মেয়েটা কেমন সেটা সম্পর্কের আগে খুব ভালোভাবেই জানা থাকে। সে কি করতে পছন্দ করে, কি অপছন্দ করে, তার খারাপ অভ্যাস গুলো কি কি, তার চলাফেরা কেমন আরো অনেক কিছু কিন্তু সম্পর্ক শুরু হওয়ার পর এগুলো নিয়েই বেশি ঝামেলা হয়। যেখানে মানুষটি কেমন সেটা জেনেই ভালোবাসেন সেখানে সম্পর্ক হয়ে যাওয়ার পর তার এসকল বিষয়ে কথা বলাটা কেমন হয়ে যায় না...? এই বিষয় গুলো একটা মেয়ের চেয়ে একটা ছেলে বেশি Face-করে। একটা ছেলে হয়তো তার চলাফেলা তার ভালোবাসার মানুষের কথায় বদলিয়ে নিতে পারে কিন্তু ধাক্কা টা খায় অন্য জায়গায়। মেয়েটা সমবয়সী হোক আর বয়সে ছোট হোক সে যাই হোক মেয়েটা কিন্তু ছেলেটার বর্তমান অবস্থা জেনেই ভালোবাসায় জড়ায় কিন্তু দু'দিন যেতে না যেতেই কথার সুর ঠিকই পাল্টায়। ছেলেটার Career- নিয়ে কথা বলে না এরকম মেয়ের সংখ্যা নাই বললেই চলে। আমি বলছি না Career- নিয়ে কথা কেন বলে, Career- নিয়ে কথা অবশ্যই বলা উচিত & এটা বলার Right-তার আছে। কারন, Career- উপর নির্ভর করে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। 

তুমি Career- নিয়ে ভাবচ্ছো না, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, আমাকে নিয়ে তোমার কোন চিন্তা নেই, এভাবে আর কত দিন, Job-এর জন্য try- করচ্ছো না কেন, ভালো Job- এর জন্য কেন Preparation-নিচ্ছো না; এরকম আরো অনেক কথা শুনতে হয়। আচ্ছা একটা ছেলে কি বেকার ভাবে বসে থাকতে চায়...? হয়তো সে Better- কিছুর জন্য try-করে কিন্তু সেটা হয়ে উঠচ্ছে না এই মুহূর্তে বা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আজ বললে কাল ই তো সে কোন Company-এর CEO হয়ে যেতে পারবে না তাই না ? Actually- আমি বলতে চাচ্ছি Career- নিয়ে একটা মেয়ে যে ভাবে কথা বলে সেটা একটা ছেলে কখনোই মেনে নিতে পারে না। এই সময়টিতে ছেলেটার Inspiration, Motivation, Support - খুব বেশি দরকার হয়। কারন, একটা ছেলে যখন সমবয়সী কাউকে ভালোবাসে তখন তার ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে থাকে শুধু তার Career-এর জন্য। সে এমনিতেই খুব বেশি Tension, Depression-এ ভোগে। একটা মেয়ে যে ভাবে Career- নিয়ে ব্যাঙ্গ করে কথা বলে তাতে ছেলেটা Inspired-না হয়ে আরও বেশি Depression-এ ভোগে Frustration-এর মাঝে দিন কাটায় Demotivated- হয়ে যায়। আচ্ছা আপনি যখন তার Career-নিয়ে কথা বলেন একবারও কি তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন? একবারও কি দেখার চেষ্টা করেছেন আপনার এই কথায় তার ভিতরটা কতোটা কষ্টে কাতর হয়ে যায়, একবারও কি দেখতে পেরেছেন তার চোখের দিকে তাকিয়ে আপনাকে পাওয়ার জন্য সে কতোটা Effort- দিচ্ছে, কিভাবে Career-এর পিছনে ছুটে বেড়াছে। যেখানে হয়তো এই সময়টিতে Career-নিয়ে তার ভাবার কথাই না। হয়তো আপনার চোখে এগুলো পড়ে না বা আপনি এগুলোকে কিছুই মনে করেন না। আপনার জন্য তার Effort-যদি আপনার চোখে না পড়ে তাহলে আপনি তাকে কতোটা ভালোবাসেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হয়...।

কয়টা মেয়ে আছে যে এই কথা গুলোকেই Positive way-তে, একটু ভালোবেসে Support-দিয়ে বলতে পারে...? হাজারে একটা পাওয়া যাবে না। আপনি জানেন কি একটা ছেলে পরিবারের কাছ থেকেও বেশি তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে Positive-কথা শুনে, Support-পেয়ে Inspired-হয়...? কিন্তু এই কাজটা কোন প্রেমিকাই করে না। দেখা যায় এমন কিছু Negative-কথা বলে যা Demotivate-করে দেয়। আমার দেখা অনেক প্রেমিক যুগল এর মাঝে Only-একটা মেয়েকে দেখেছিলাম যে তার প্রেমিক কে Support- দিতো যেখানে ভাইয়া বেকার ছিল, অপর পাশে আপুটা Job-করতো। ভাইয়ার Job- হচ্ছিল না কিন্তু আপুটা যেভাবে Support-দিত সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।  খুব কম মেয়েই এই কাজটি করতে পারে। 

একটা ছেলের যখন Support-প্রয়োজন ঐ সময়টিতে তার ভালোবাসার মানুষের মতো Support- আর কেউই দিতে পারে না। সফল একজন মানুষ হওয়ার জন্য পরিবারের ভূমিকা অনেক, কিন্তু আমি মনে করি পরিবারের চেয়ে প্রিয়জন, ভালোবাসার মানুষ বেশি Support- দিতে পারে সফল হওয়ার জন্য। যারা এই Support- পায় এদের মতো ভাগ্যবান আর কেউই নেই। 

যাকে ভালো লাগে, সে হয়তো আমার মত না। ভালো তো কত মানুষকেই লাগে। কারো চেহারা দেখে ভালো লাগে, কারো কাজকর্ম দেখে ভালো লাগে, কারো কথা শুনে ভালো লাগে। ভালো লাগার কোন শেষ নেই । ভুলটা হয় তখনই যখন শুধুমাত্র ঐ 'ভালো লাগা' এর উপর ভিত্তি করে আমরা কাউকে পাকাপাকিভাবে নিজের জীবনের সাথে জড়ানোর চিন্তা করি !!

যাকে ভালো লাগে, সে হয়তো আমার মত না। তার সাথে হয়তো আমার কিছুই মেলে না। তার হয়তো আমার মত জোছনা ভালো লাগে না। যে টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক তার ঠোঁটে আমি কল্পনা করতাম, সেই লাল রং হয়তো তার ভীষণ অপছন্দ। যে নীল রঙের পাঞ্জাবি তার ভীষণ ভালো লাগে, আমার হয়তো নীল রঙের কোন পাঞ্জাবিই নেই !! সে হয়তো অনেক খোলা মেলা মনের, অনেক Extrovert- অপর দিকে আমি হয়তো অতোটা খোলা মেলা মনের না- Introvert.

আমার নীরবতা ভালো লাগে, হয়তো এমন হতে পারে তার কোলাহল পছন্দ। আমার প্রিয় বইটার উপর তার বাড়ির ধূলো গুলো জমতে থাকে প্রতিনিয়ত। প্রচন্ড চঞ্চল ঐ মানুষটাকে আমার মত চুপচাপ কম কথা বলা মানুষের ভালো লাগে, হয়তো তারও আমাকে ভালো লাগে। কিন্তু দিনশেষে, সে আমাকে বুঝে না, আমিও তাকে বুঝি না, একদম না !! মন দিয়ে মন না বুঝলে কি কিছু হয়...!!! কিচ্ছু না...

তার এলো চুল গুলো দু' আঙ্গুল দিয়ে সরিয়ে দেয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা কিংবা চোখের কাজলের ভেতর মায়া খুঁজে পাওয়া অথবা হাতের মুঠোয় হাত রেখে একটা হৃদস্পন্দন মিস করে যাওয়াটাই কি সব ??

দিনশেষে শত সহস্র অমিল গুলোর কাছে আর কেউ কাউকে না বুঝতে পারার দ্বন্দ্ব গুলোর কাছে এইসব ভালোলাগা গুলো, তীব্র অনুভূতি গুলো হেরে যায়। হেরে যেতে বাধ্য...!! অমিল গুলো মনে খুব ভালোভাবেই বসে যায়। এই অমিল গুলোই পথ চলায় বাঁধা, পথের কাটা। এই কাটা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। 

ভালোলাগার মানুষের সাথে মাঝে মাঝে ভালো থাকা যায় না এই অমিল গুলোর জন্য। ভালোলাগা আর ভালো থাকা এর মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে অমিলের দেয়াল। তবে ভালোলাগাতে দোষ নেই। সে হয়তো অনুভূতি বোঝে না, অনুভূতির পরোয়া করে না !! কিন্তু নিজের অনুভুতি তো নিজের কাছে, নিজের ভালোলাগাতো একান্তই নিজের...।  তবু ভালোবাসা বেঁচে থাকে মনে, ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখে, মন দিয়ে মনকে টানে...। 

সঠিক সময়ে হোক আর ভুল সময়ে হোক, জীবনের কোন এক সময় আমরা ভালোবেসেই ফেলি। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা কখনোই চলতে পারি না, মনের সাথে তো নয়-ই। যে মানুষটি ভালোবাসা থেকে হাজার মাইল দূরে থাকতে চায় সেও একটা সময় অনুভব করে তার জীবনে একজন মনের মানুষ দরকার, মনের কথা বুঝার মতো কেউ একজন দরকার। তবে ভুল সময়ে কারো জীবনে গিয়ে বা কাউকে জীবনে এনে ভালোবাসার অর্থ- আমরা বদলীয়ে দেই। একটা ছেলেকে জীবনে আনা যেমন সহজ কাজ নয়, ঠিক তেমনি একটা মেয়েকেও জীবনে জড়িয়ে ফেলা সহজ কাজ নয়। অনেক সময় অনেক হিসেব-নিকেশ করতে হয় যদি হোঁচট খেতে না চায়। 

কোন ছেলের প্রেমে যদি পড়তেই হয়, ভালোবাসতেই হয় তবে ছেলেটির জীবনের সবচেয়ে খারাপতম সময়েই তাকে ভালোবাসা উচিত একজন মেয়ের। জীবনের ভালো সময়ে সব ছেলেই থাকে নিজের দুনিয়ায় রাজা। রাজার প্রেমে তো জরিনা থেকে জারিন সবাই পড়তে চায়। জীবন যুদ্ধে দুর্দান্ত অসহায় সময়ে একজন ছেলের পাশে কেউ ই থাকতে চায় না। আর যে মেয়েটি এই জীবন যুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়, অসহায় পরাজিত ছেলেটির আশ্রয় হয় যে মেয়েটি; তার মতো সাহসী এবং সহিষ্ণু নারী হবার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। সবাই এই সাহসিকতা দেখাতে পারে না। এই খারাপতম সময়ে একটা ছেলের হাত ধরার মতো, পাশে থাকার মতো, পাশে থেকে সাহস যোগানো খুব সহজ কাজ নয়। খুব কম সংখ্যক মেয়েই পারে এই কাজ করতে, হাতে গোনা ১% এরও কম। এই সময়ে যে মেয়েটি কোন ছেলের জীবনে পাশে থাকে সে আর যাই হোক ঐ মেয়েকে কখনোই ছেড়ে যেতে পারে না।

ভালোবাসার মেয়েটির মুখের ছোট্ট এক টুকরো হাসি দেখার জন্য যে পুরুষটি পুরো নীলক্ষেতের সমস্ত গল্পের বই কিনে চমকে দিতে পারে, শীতের ভোরে আলো ফোঁটার আগেই পুরো শহরের সমস্ত ফুল মেয়িটির বাসার দরজায় উপহার পাঠাতে পারে-- এ রকম রোমান্টিক, যত্নশীল মনের এবং প্রতিষ্ঠিত, পয়সাওআলা পুরুষকে তো সব মেয়ে-ই ভালোবাসতে পারে এবং ভালোবাসতে চায়ও। কিন্তু জীবন নামক যুদ্ধে যখন এই প্রতাপশালী এবং দুর্দান্তরকম ভালোবাসতে জানা পুরুষটিই জীবনের চরম খারাপ সময়ে এসে দাঁড়ায়, এতোটাই অসহায় সময় সামনে আসে যে সূর্যের আলোটুকুও তাকে হিসেব কষে দেখতে হয় , অক্সিজেন টানতে হলেও হিসেব কষতে হয় , বেঁচে থাকাই যেখানে বড় চ্যালেঞ্জ-- এ রকম সময়ে তার জীবনের সব থেকে প্রায়োরিটি পাওয়া মেয়েটি, ভালোবাসার মানুষটি কি করবে বলুন তো...?

এ রকম পরিস্থিতিতে সম্ভবত দুটো অপশন থাকে মেয়েটির সামনেঃ- 

এক--"We are Just Friend" বলে কেটে পরা। আর যাওয়ার সময় বলে যাওয়া "আরে আমি তো তোমাকে শুধু বন্ধু ভাবতাম এর বেশী কিছু না, আমরা ভালো Friend- হয়েই থাকি"- বলে ফেলা। বর্তমান ভার্চুয়াল যুগে সব থেকে সহজ অপশন হচ্ছে এটা।

দুই-- আমরা যারা 90s-এর তারা সম্ভবতঃ যা করবে তা হলো নিজেও সূর্যের আলো দেখা বন্ধ করে দিবে, সূর্যের আলোটাকে আলো ভাববে না। নিজেও হিসেব কষে অক্সিজেন টানবে। এমনকি নিজের ঘরে ভালো খাবার থাকলেও খাবে না কিংবা এসি থাকলেও তা আর অন করা হবে না, কিংবা নিজের গাড়ি থাকলেও গাড়ি Use- করবে না। পুরুষটির সমান কষ্টটুকু মেয়েটি নিজেও ফিল করতে চাইবে। যদিও এটা করা খুব সহজ কাজ নয়, এতোটা Risk, অনিশ্চয়তায় কোন মেয়েই হয়তো সাহস করে থাকবে না। থাকার কথাও নয়। 

যদিও বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসব কাজকে পাগলামো বলা হলেও এসব পাগলামোতে মেয়েটি ভালোবাসা খুঁজে পেতে চাইবে, একটু বেঁচে থাকতে চাইবে। আর তার প্রতিবেলার নামাজের প্রার্থনা তে ভালোবাসার মানুষটির জন্য দোয়া চাইবে, তার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য চাইতেই থাকবে স্রষ্টার কাছে।

খুবকরে ভালোবাসতে জানা এই পুরুষটি যখন অন্ধকাচ্ছন্ন সময় কে পেছনে ফেলে বেঁচে ফিরে আসবে কাঙ্খিত নারীটির কাছে তখন সারা জীবনের জন্য একজন পুরুষকে জয় করে তার কলিজা হয়ে যাবে মেয়েটি। কারণ, শুধু ভালো সময়ে নয়, জীবনের সব থেকে খারাপতম সময়ে নারীটি সব ধরনের অপশন থাকার পরেও ছেলেটিকে ছেড়ে চলে যায়নি। চাইলেই পারতো অনেক ভালো কোন অপশন বেছে নিতে। ভালোবাসাতে কোন অপশন নেই, ভালোবাসা Fixed-থাকে একজনের মাঝে, মনটা একজনের জন্য Fixed-  হয়ে যায়। 

অপরদিকে একজন অসহায়, বিপদে পড়া কোন মেয়েকে প্রোপোজ করার মাঝে কোন বিশেষত্বর কিছু নেই। অসহায়, দুঃসময়ে একজন মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর মতো, মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার পুরুষের সংখ্যার অভাব নেই। শুধু আমাদের সমাজেই অগণিত না বরং পুরো পৃথিবী জুড়েই অসংখ্য।সুযোগ সন্ধানী তো সবাই হতে পারে। ক'জন পুরুষ পারে ভালো সময়ে, জীবন যুদ্ধে On fire- এ থাকা একজন যোদ্ধা নারীকে নিজের করে পাবার চেষ্টাটুকু করতে ? একজন তীক্ষ্ম অনুভূতি সম্পন্ন Sensible- প্রতিষ্ঠিত নারীকে জয় করে ক'জন পুরুষ পারে ভালোবেসে নিজের মাথা নতজানু করতে ? ক'জন পারে একজন মেয়ের হাজার অপশন থাকার পরেও তাকে নিজের করে পেতে, তার ভালোবাসাতে মেয়েটিকে জয় করতে...? সব পুরুষ পারে না। একটা মেয়ে খারাপ সময়ে সব চেয়ে বেশি ভুল করে, এই সময়ে তাকে কেউ একটু Support-দিলে, একটু পাশে থাকলে সে তাকেই আপন ভাবতে শুরু করে। আর এই সময়ে সুযোগ সন্ধানী অনেক ছেলের পাশে এসে ভীড় জমায়। কিন্তু ভালো সময়টিতে একটা মেয়েকে ভালোবেসে মন জয় করে কাছে পাওয়া যুদ্ধ জয় করার চেয়েও বেশি কষ্টকর। একটা মেয়েকে যদি ভালোবাসতেই হয় তাহলে মেয়েটি যখন "আসল আমি থাকে" "দুর্বল আমি না" তখন ভালোবেসে বুকে জড়াতে হয়।

MARI themes

Powered by Blogger.