আমার কিছুই ভাল্লাগেনা । এই ধরনের একটি কথা আমার মাথায় বার বার আসলেও আমি ঠিক সে রকম করে বার বার বলতে পারি না । ভালো লাগা , না লাগা , মন খারাপ কিংবা ভালো নেই এই ব্যাপার গুলো একা একা মেনে নিতে ভাল্লাগে না। শুধু আমার নয়, আমার মনে হয় আমার মতো অনেকেরই একা একা মেনে নিতে ভালোলাগে না। কাউকে না কাউকে বলতে ইচ্ছে হয় । বলাটা ঠিক কঠিন কিছুও নয়। মুখ দিয়ে খুব সহজেই এই কাজ টি করা যায় । কিন্তু বলার মতো মানুষটিই খুজে পাওয়া কঠিন। আমার আশে পাশে সব মানুষ গুলোই এমন। সব মানুষ বলতে হাতে গোনা দুই - তিন জন, যাদেরও কোন কিছুই ভাল্লাগেনা । সুতরাং মন খারাপ করার অতি জরুরী সংবাদটি কিংবা আমি ভালো নেই এই ব্যাপার গুলো তেমন ভাবে বলতে ইচ্ছে হয় না বা বলা হয়ে উঠে না । তারপরেও আমার না ভালো লাগার ব্যাপারটি আমি কাউকে না কাউকে জানিয়ে দেই। বেশির ভাগ জানানো হয় আমার ব্লগ বা Facebook Page-এ লিখে। আমার ভালো না লাগবার কথা শুনে আমার আশে পাশের মানুষ গুলোর ঠিক তেমন ধরনের ভাবান্তর হয় না কিংবা তাদের চিন্তাগত তেমন একটা পরিবর্তন আসে না বলেই চলে। কেবল মুখের অবস্থানগত একটা পরিবর্তন হয় । “ও আচ্ছা” জাতীয় বাক্যটিই শুধু মুখ দিয়ে বের হয়। আমি তাই আজকাল দীর্ঘক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি আর প্রায়ই ভাবার চেষ্টা করি এর শেষ কোথায় । অর্থহীন ভাবনা তো বটেই। রাত যতই হোক রুম থেকে বের হয়ে যাই তখন। অন্ধকার রাতে খোঁজার চেষ্টা করি নির্জন কোন রাস্তা বা কোন স্থির লেক বা পুকুর। তার পর চুপটি মেরে বসে থাকি মন যতক্ষণ সারা দেয়।  

আমরা প্রায় সময়ই 'ডিপ্রেশন' আর 'মন খারাপ' এই দুইটা শব্দ গুলিয়ে ফেলি। অথচ শব্দ দুটির মাঝে পার্থক্য অনেক, কোন দিক দিয়েই এক নয়। আমাদের মন খারাপ হয় ছোটখাটো কিছু কারনে, খুব নগণ্য বিষয় নিয়ে। যেমন, প্রিয় মানুষটা কথা শুনেনি বা কথা রাখেনি অথবা আব্বু-আম্মুর উপর ভীষণ অভিমানে। একটু পরই সেটা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ডিপ্রেশসড্ আমরা তখন হই যখন অনেকের মাঝে থেকেও আমাদের মনে হয় আমাকে বোঝার মতো কেউ আসলে নেই। যখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের খারাপ লাগা বা একা লাগার ব্যাপার গুলো কেউ কেয়ার করেনা। যখন খুব মন চায় একজন কেউ এসে বলুক,'আমি তোমার সব কথা শুনবো' কিন্তু এমন কেউই আসলে আসেনা। নিজের সব টুকু দিয়ে কেনই বা কেউ এভাবে চাইবে...? সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকে। এটাই স্বাভাবিক... 

অনেকের মাঝেও নিজেকে একা লাগার অনুভূতির মতো ভয়ংকর অনুভূতি বোধ হয় আর হয়না।সবার সাথে আমি হয়তো খুব হাসিখুশি কিন্তু এই আমিই হয়তো হাসি থামার পর ভীষণ একা। মাঝে মাঝে হয়তো মনে মনে চিৎকার করে বলি,"আমি অনেক একা। ভীষণ একা। প্লিজ কেউ আমার কথা গুলো শুনো। প্লিজ কেউ আমার মন খারাপ বুঝো"!
কিন্তু মুখে একটা মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে রেখে বুঝাই আমি অনেক হাসিখুশি একজন মানুষ "এটাই ডিপ্রেশন"।

"সে শুধু আমার " এই কথাটি আমি কখনো চিন্তাই করিনা। আমি সর্বোচ্চ বলতে পারি "আমি শুধু তার"। সে আমার বা আমার হয়েই সারা জীবন থাকবে এটা আমি কখনোই Guarantee-দিতে পারি না।  তাকে আমার বলার আগে আমি ভাবি, আমি নিজেই তো আসলে কারো না।যেখানে আমি নিজেই কারো না, সেখানে আমি অন্য একজনকে নিজের বলে দাবী করতে পারি না। পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কেউ হয়তো ভেবে বসে আছে, "আমি শুধু তার"। কিন্তু আসলেই কি আমি তার? আমি কি আমার নিজেকে কাউকে দিতে পেরেছি বা পারবো কখনো?

এই পৃথিবীতে একটা মানুষও পুরোপুরি অন্য কারো হয়না। এটা কখনোই সম্ভব নয়, যদি কেউ বলে যে সে পুরোপুরি তার, তবে এটা ১০০% মিথ্যা কথা। নিজের সমস্তটা আসলে কাউকে দেওয়া যায়না, কখনোই না। তুমি প্রায়ই শুনতে পাবে "তুমি শুধু আমার" কিন্তু কখনো বলতে শুনবেনা, "আমি শুধু তোমার"। কেন বলে না ...? মানুষ মূলত অন্যকে নিজের করে পেতে চায়, পুরোটা পেতে চায়। একটা আস্ত মানুষের মন এবং শরীরের সম্পূর্ন অধিকার চায়। কিন্তু, কাউকে পুরোটা পাওয়ার জন্য মানুষ তার নিজেকে পুরোটা দিতে চায় না।

আমি আমার নিজেকে হারিয়ে, নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে কাউকে পেতে চাইনা। আমি চাই, সে আমার হোক আর সে চায়, আমি তার হই। দিনশেষে আমরা আসলে কেউই কারো হয়ে উঠতে পারিনা। এটাই বাস্তবতা...কাউকে পেতে চাইলে নিজেকে সমান ভাবে তার দিকে আগাতে হবে, তাকেও সমান ভাবে আগাতে হবে। একজনের একটু কম বেশি হলেই কেউ কারো মতো না এটাই প্রকাশ পাবে।

আমি প্রচন্ড Liberal-স্বভাবের মানুষ! সম্পর্কের যেসব দায়বদ্ধতা থাকে সেগুলোকে খুব গভীর ভাবে মনে গেঁথে ফেলি, ভালোবেসে ফেলি। প্রিয় মানুষের অভিমান ভাঙাতে গিয়ে যে সময় বিনিয়োগ করতে হয়, এই ছোট্ট জীবনে অত'টা সময় আমার কাছে নেই! নেই বললে ভুল হবে...। অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা বড়জোর একবার দুবার করা যায়। ভালোবাসি বললে অভিমান, রাগ ভেঙ্গে যাবে এটাতেই আমি বিশ্বাস করি। এরচেয়ে বেশি জমিয়ে রাখলে সেটা আর অভিমান, রাগ এ সীমাবদ্ধ থাকে না। এই অভিমান তখন সম্পর্কে একটু একটু করে বিষাক্ত করে দেয়।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা আসলে ভালোবাসার দাবী নিয়ে বিপরীত মানুষটার স্বাধীনতা নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করি। এটা করা যাবেনা, ওটা করা যাবেনা! এভাবে চলো, ওভাবে চলো! এত রাতে বাইরে কি করো? তোমার ফোন ওয়েটিং কেন? তোমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড দাও! তুমি ওই মেয়ে বা ছেলের দিকে তাকাইলা কেন? আরেকজনের ছবিতে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছো কেন? রাতে খেয়েছো? খাও নি কেন? ঘুমিয়েছো? এখনো ঘুমাও নি কেন? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না! তোমাকে এখন আর বিশ্বাস করিনা! তোমার সাথে আমার এডজাস্ট হচ্ছেনা! We are not made for each other. তোমার মতো মানুষকে ভালোবেসে ভুল করেছি, এভাবে আর হয়না...! Fantasy Level Cross- করলেই আমাদের অভিযোগের তালিকা বড় হতে থাকে। যার জন্য একজীবন বাঁচতে চেয়েছিলে, তার জন্যই জীবনটা বিরক্তিকর মনে হবে। কিন্তু আমার কাছে বিষয় গুলো অন্য রকম, আমি একটু ভিন্ন ভাবে দেখি। সে যখন আমার অস্তিত্ব থাকবে তার প্রতি আমার, আমার প্রতি তার একটা অধিকার, নির্ভরশীলতা থাকবে। সে যদি আমার অস্তিত্ব থাকে আমার সব বিষয় তার কথা বলার, ভালো- মন্দ জানার অধিকার তার আছে। এই বিষয় গুলো চাইলেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নেওয়া যায়, আবার Dominating- হিসেবেও নেওয়া যায়। Dominating- করছে এটা ভাবলে সম্পর্ক বিষিয়ে যাবে, ভালোবাসার বহিঃ প্রকাশ ভেবে নিয়ে ভালোবাসা বাড়বে।

নিজেকে নিয়ে বাঁচতে শেখাটা ভীষন জরুরী..
পরনির্ভরশীলতা একটা ব্যাধির মতো। এই অসুখ একবার ভেতরে জন্মে গেলে, তোমার চলার পথ কঠিন হয়ে উঠবে যদি ভালোবাসা টা মনে না থাকে। তবুও, আমার সাথে সবার মতাদর্শ মিলবেনা। কেউ কেউ প্রচন্ড পরনির্ভরশীল হতে ভালোবাসে। ফোনের ওপাশ থেকে কেউ খেতে না বলা পর্যন্ত খাবেনা। অসুখের সময় দু'বেলা যত্ন না নিলে কান্না করে চোখ লাল করে ফেলবে। একজন নির্দিষ্ট মানুষের অযত্নে মরে যেতে চাইবে, অভিমান করবে। অভিযোগ করবে, তারা পরজীবী হতে ভালোবাসে। তারা তাদের নিজের অস্তিত্বকে অন্যের কাছে হস্তান্তর করে দেয়। তারা এভাবেই ভালো থাকে। কারণ তারা ভালোবাসায় নিজেদের একই সুতোয় ভালোবাসায় বেঁধে রাখে। নিজের বলতে তখন একা বুঝায় না, দুজনকে মিলিয়েই বাঁচা বুঝায়। অর্থটা একটু ভিন্ন...।। শুধু নিজেকে নিয়ে বাঁচা, আরেকটা হলো ভালোবাসার মানুষের সাথে ভালোবাসা নিয়ে বাঁচা...।। 

অনেকে বলে,
যে মানুষ আমার হবে, সে মানুষ আমারই! যত্নে অযত্নে সে আমার। স্বাধীনভাবে বাঁচার পরও সে আমার। দু'জন মানুষ তার নিজ নিজ কক্ষপথে হেটে চলেও ভালোবাসতে পারে। এই ম্যাচিউরিটিটা আমাদের আসেনা। কিন্তু আমি বলি, ভালোবাসার সম্পর্কে ম্যাচিউরিটিটা আনতে নেই। ম্যাচিউরিটি  বলতে সম্পর্কের ছোট ছোট আল্লাদ, খুনসুটি, অভিমান, পাগলামো কে বুঝাচ্ছি। এগুলো সম্পর্কে সজীব রাখে, বাঁচিয়ে রাখে। এগুলোর মাঝে ম্যাচিউরিটি চলে আসলে সম্পর্ক আর সম্পর্ক থাকে না, কর্কশ হয়ে যায়, প্রাণটা চলে যায়। ভালোবাসা মানেই পাগলামো, এক জনের জন্য আরেক জনের ভালোবাসার পাগলামো...।।

আমরা ধরে নেই, যে আমার মানুষ হবে তার কোন ব্যক্তিগত জীবন থাকা যাবেনা। আমাকে ভালোবাসে মানে, তার জীবনের প্রতিটা জায়গায় আমার থাকা বাধ্যতামূলক। ভালোবাসার নামে আমরা মাঝে মাঝে বিরক্তি সৃষ্টি করি। সম্পর্কের এত এত দায়বদ্ধতায় একসময় দমবন্ধ লাগবে অপর পাশের মানুষটার। আমরা নিজে নিজে একজন অন্যজনের প্রতি থাকা বিশ্বাসের জায়গাটা নষ্ট করি।

যে মানুষ তোমাকে ঠকাবে, তুমি হাজারটা Restriction- দেওয়ার পরও সে ঠকাবে। যে রয়ে যাবে জীবনে, সে রয়েই যাবে। রয়ে যাওয়া মানুষ আসলে Restriction- এর জন্য রয়ে যায় না, রয়ে যায় তোমাকে সে ভালবাসে বলে। এমনি এমনি রয়ে যায়, সে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারে না বলে রয়ে যায়, অন্য কাউকে ভাবতে পারে না বলে রয়ে যায়। তার উপস্থিতিতে তোমার অক্সিজেনের অভাববোধ না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক, তেমনি তোমার উপস্থিতিতে সে সাচ্ছন্দ ভাবে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে এটা অনুভব করাটাই ভালোবাসা। তার প্রতি ভালোবাসাটা একদম ভেঙেচূরে টাইপ ভালোবাসা...।।

MARI themes

Powered by Blogger.