রাগ কে আমরা কেইবা পছন্দ করি...? কেউ না...।। রাগ খারাপ জিনিস হলেও রাগী মানুষরা কিন্তু খারাপ নয়।   রাগীরা মানুষ হিসেবে অনেক চমৎকার হয়, তাদের থাকে প্রবল ব্যক্তিত্ব। থাকে নিজস্বতা, আত্বসন্মানবোধ। একটা মানুষকে চেনা সহজ নয়, খুব কঠিন, খুব বেশিয় কঠিন। তবুতোঁ আমরা মানুষ চেনার চেষ্টা করি। মানুষ চেনার উপায় হল মনের ভেতর ও বাহিরের পার্থক্য। যার যত এই পার্থক্য কম, সে তত ভাল। খারাপ মানুষদের এই পার্থক্য অনেক বেশি। রাগী মানুষদের মন ও বাহিরের মাঝখানে একটি স্বচ্ছ কাঁচের দেওয়াল থাকে। মনে কি লুকিয়ে আছে সহজেই দেখা যায়। মনের ভেতর এবং বাহিরের পার্থক্য খুব কম থাকে তাদের। যখন রাগ করে, তখন হয়তো অনেক কিছুই বলে বা করে ফেলে। কিন্তু যখন বুঝে, খুব সুন্দরভাবে সেটা মেনে নেয়। এদের মাঝে আরেকটি খুব ভালো ব্যাপার হল- এরা যখন রাগ করে বা রেগে যায় তখন এরা মনের সব কথা বলে দেয়। আপনার সম্পর্কে যতো অভিযোগ যত কথা সব হরহর করে বলে দেয়। গোপন করে কিছুই রাখে না। কিন্তু যারা রাগে না তাঁরা সব কিছুই গোপন করে যায়। বাহিরে এক রকম আর ভিতরে আরেক রকম থাকে।

দুজন মানুষ যতই Close, আপন হোক না কেনো, অথবা যতই Best Friend- হোক না কেনো তাদের মন-মানসিকতা পুরোপুরি এক হয় না, হওয়া সম্ভবও না। হিউম্যান সাইকোলজিও তাই বলে। মতের অমিল থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। রাগের বশে আমরা যখন প্রিয় মানুষ গুলোর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকি Sacrifice আর Compromise- এর বিষয়টা ঠিক তখনই চলে আসে। রাগ, অভিমান, খুনসুটি এই শব্দ গুলোর মাঝে আমরা গন্ডগোল বাঁধিয়ে ফেলি। রাগ সবার জন্য হলেও, অভিমান আর খুনসুটি প্রিয় মানুষ গুলোর জন্যই।

রাগি মানুষ ওয়াদা করে কখনো ওয়াদা ভাংগে না, কথা দিয়ে কখনো কথার খেলাপ করে না। এদের জীবনে নিজস্ব একটা নীতি থাকে। রাগী মেজাজী মানুষ গুলো অনেকটা দৃঢ়চেতা স্বভাবের হয়ে থাকে।আবার এদের মন ভালো হয়।মানুষের অন্যান্য সকল অনুভূতির মত রাগও একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ আবেগ। এরা প্রচণ্ড রকম ভালবাসতে পারে। আর সেটা হয় সত্যিকার ভালোবাসা। এরা অন্যদের হয়তো পাত্তা দেয় না, মুখের উপর অনেক কিছুই বলে ফেলে। ফলে অনেকেই তাদের অহংকারী ভাবে, কিংবা ভুল বুঝে বা রাগি ভেবে দূরে থাকে কিন্তু তাঁরা জানে না বাহিরে রাগ থাকলেও মনে কতোটা ভালোবাসা, মায়া লুকিয়ে আছে। এরা যাকে ভালোবাসে অন্তর থেকে ভালোবাসে। আর সেই ভালোবাসায় থাকে সততা আর বিশ্বস্ততা। হয়তোবা এই জন্যই রাগীরা খুব ভাল সংসারী হয়, জীবনসঙ্গী হিসেবে Best- হয়। কিন্তু সকলে তাদের বুঝতে পাড়ে না। রাগী মানুষ দেখে ভুলটাই সব সময় বুঝে। 

আমরা অনেক সময়ই বলি সে আমার মতো না। আমার যা পছন্দ তার সেগুলো পছন্দ না, আমি যা করতে ভালোবাসি সেগুলো সে করতে ভালবাসে না। তার সাথে আমার যাবে না, তার সাথে আমার মিল হবে না। আসলে কি জানেন জীবনে চলতে গেলে দুটো মানুষ একরকম হলে সুখী হওয়া যায়না।দুইজন কে দুই রকম হতে হয়।একজন রোদ হলে আরেকজন কে বৃষ্টি হতে হবে। একজন অনেক রাগি হলে অপর জনকে ঠাণ্ডা মেজাজের হতে হবে। একজন অনেক বেশি কথা বলা স্বভাবের হলে অপর জনকে কম কথা বলার স্বভাবের হতে হবে। 

কেউ কেউ তো প্রথমেই লাফিয়ে ওঠে যে আরে সে তো আমার মত, তার সাথে আমার স্বভাবের অনেক মিল সে নিশ্চয় আমাকে অনেক ভালো বুঝবে।এই ভাবনা টা একদমই ভুল। একই স্বভাবের দুইজন একসাথে থাকা মানেই ঝগড়া। যেমন একজন রেগে গেলে অন্যজনকে তো অবশ্যই মানাতে হবে। এখন দুইজনই যদি সমান তালে ঝগড়া করে তাহলে জীবন আর জীবন থাকবে না। জীবনের নাম হবে জাহান্নাম। আর এভাবেই শুরু হয় দু'জনের মাঝে দূরত্ব, সম্পর্ক নষ্টের বড় কারণ।

একজন হয়তো একটু অবুঝ, অপরজন যদি ভালোবেসে বোঝায় তবে সেই অবুঝ মানুষ টা নিশ্চয় বুঝবে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ। সে ঠিকই বুঝবে অপর পাশের মানুষটি কি চাচ্ছে, কি বুঝাতে চাচ্ছে। একজন হয়তো একটু বেশি রাগী, অপরজন যদি গাল টা টেনে ধরে একটু আদর করে বলে এত রাগ করতে হয়না; চলো সব মিটমাট করে নেই। তাহলে দেখবেন আর রাগারাগি টা থাকেনা। ভালোবাসা আরও বাড়বে। একজন অভিমান করলে অপরজন যদি অভিমান টা ভাঙায় তবে সেই অভিমান গভীর ভালোবাসায় রুপ নিবে। এখন দুই জন'ই যদি অভিমান করে বসে থাকে তাহলে সেই অভিমান কখনোই ভালো কিছুর রুপ নিবে না। দুইজন মানুষ একসাথে থাকলে ছোট খাটো ঝগড়া হবেই। ঝগড়ার সময় একজনের চুপ থাকতে হবে নাহলে ঝগড়া বাড়তেই থাকবে। বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হলো দুইজন ব্যক্তি একই রকম হওয়া। একজন অনেক বেশি কথা বলা স্বভাবের হলে, অপর জনকে সেই কথা হাসি মুখে শুনতে হবে। এখন দুই জনই যদি একই ভাবে কথা বলে তাহলে কে কার কথা শুনবে। 

তাই একজন অবুঝ, রাগী মানুষের জন্য শান্ত মানুষই উপযুক্ত। অবুঝকে বোঝান আর যে বুঝে তাকে সম্মান করুন, ভালোবাসুন।

ভালোবাসায় কখনো চাওয়া - পাওয়া থাকে না। যেটা থাকে সেটা হচ্ছে অধিকার, এক জনের প্রতি আরেকজনের অধিকার। ভালোবাসায় কোন প্রতিশোধ থাকে না। মানুষ টা যার সাথে ভালো থাকতে চায় তাকে তার মতো ছেড়ে দেওয়া উচিত। চাপ দিয়ে একটা সম্পর্কে জোর করে কখনো ভালোবাসা আদায় করা যায়না, ভালোবাসায় পরিণত করা যায় না। এটা তাহলে আর ভালোবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা, এটা বাজারের নিলামে উঠানো ভালোবাসা হয়ে যায়।

যদি আপনার হাসিতে কেউ তিল পরিমাণও সুখ খুঁজে পায়, তাহলে হাজার কষ্টে থাকলেও আপনার অবশ্যই হাসা উচিত। এই পৃথিবীতে খুব কম মানুষ থাকে, যাদের হাসিতে অন্য কেউ ভাল থাকে। অন্য কারো প্রার্থনায় যারা বাস করে, নিঃসন্দেহে এই মানুষ গুলো অনেক ভাগ্যবান, অনেক বেশি ভাগ্যবান নিয়ে বাঁচে। অথচ এদের মধ্যেই অনেকে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্যে দিনরাত ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকেন। একটা মানুষ আপনাকে একটু সুখী দেখবে বলে নিজের সবটুকুই সপে দিচ্ছে, আর আপনি জীবনের প্রতি বিমুখ হয়ে আছেন, তার প্রতি উদাসীনতা দেখাচ্ছেন ! দিন শেষে কিন্তু আপনি নিজেই নিজের মাঝে একা হচ্ছেন, নিজেকে ভালোবাসা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। যার জীবনের পুরোটাই আপনার অস্তিত্ব, আপনার অস্তিত্ব ঘিরেই তার সব কিছু। আর সেই তাকেই আপনি অবহেলায় দূরে সড়াছেন। হারাচ্ছেন কিন্তু আপনিই, ভালোবাসা থেকে হারাচ্ছেন, ভালোবাসার মানুষটিকে হারাচ্ছেন।

আপনি যদি কোন কিছু নিয়ে জীবনকে ধিক্কার দিয়ে জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেন, তাহলে বলতেই হয় আপনি জীবনের মানে টাই বুঝেন নি। জীবনটা খুব ছোট, এই ছোট্ট জীবনে জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে হয়, জীবনকে অনুভব করতে হয়। আপনার কাছে যদি জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার ১০ টি কারণ থাকে, তবে জীবনে রয়ে যাওয়ার, জীবনকে কাছ থেকে দেখার ১০০০ টি কারণ রয়েছে। আপনি সেই কারণ গুলোর মুখোমুখি হতে চাইছেন না বলেই খুঁজে পাচ্ছেন না।

যে মেয়েটা কিংবা ছেলেটা আপনাকে পাগলের মতো ভালোবেসে আর আপনি মুখ ফিরিয়ে আছেন দেখবেন এই মানুষটিকেই একদিন খুব বেশি দরকার আপনার। খুব দেরি করে হলেও একদিন আপনার মনে হবে সেই মানুষটির মাঝেই আপনার সুখ গুলো ছিল কিন্তু সেটা ঐ সময়টিতে বুঝতে পারেন নি বা বুঝতে চান নি। 

একটি সময় তার সব কিছুই খুব বেশি মিস করবেন। বড্ড মিস করবেন তার Care- গুলো। যেগুলো ভালোবাসায় মিশে ছিল, তিলেতিলে গড়ে তোলা তার মাঝে আপনার অস্তিত্ব। এখন যে বিষয় গুলো আপনার কাছে নেকামো, ডং মনে হচ্ছে একটি সময় এই বিষয় গুলোই আপনাকে কাঁদাবে, চুপ করিয়ে দিবে। আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে বিষয় গুলোতে কতো ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল।  

ঘুম থেকে উঠেই তার কাছ থেকে পাওয়া "Good Morning" text-টি হয়তো এখন আপনার কাছে কোন মূল্যই বহন করে না, তেমন কিছু মনে হয় না। আপনি হয়তো জানেন না "Good Morning" is not just a text, it's a silent message remanding that he/she remember you when he or she wake up." একটু ভেবে দেখেছেন কি একটা মানুষের দিন শুরু হয় আপনার কথা ভেবে, আপনাকে wish-না করে যার দিন শুরু হয় না। আর আপনার কাছে এটার কোন Value-ই বহন করে না...!!! 

অসুস্থ হলে না চাইলেও ওষুধ খেতেই হয়, অনেকটা বাধ্য হয়েই খেতে হয়। কেউ বললেও খেতে হয়, না বললেও খেতে হয়। একটু ভেবে দেখেন তো আপনার অসুস্থতায় আপনার পরিবারের মানুষ ছাড়াও কেউ একজন অস্থির থাকে, কেউ একজন ঠিকি মনে করিয়ে দেয় আপনি ওষুধ খেয়েছেন কিনা। আপনার কাছে মনে হতেই পারে সে না বললেও তো আপনি ওষুধ এমনিতেও খেতেন। কিন্তু একটু অন্য ভাবে ভেবে দেখুন তো, আপনি ওষুধ খেতে যেন ভুলে না যান, আপনার সুস্থতা তার কাছে কতোটা জরুরী এটাই কিন্তু প্রকাশ পায় কিন্তু আপনি এই মুহূর্তে সেটা বুঝতে পারচ্ছেন না। সময় মতো Breakfast, Lunch, Dinner- করা বেশির ভাগ সময়ই করা সম্ভব হয়ে উঠে না। কিন্তু কেউ একজন ঠিকই মনে করিয়ে দিবে আপনাকে Lunch-এর কথা। হয়তো ব্যস্ততায় সে নিজেই Breakfast- করতে পারেনি কিন্তু আপনাকে বলতে সে ভুলে নি। আপনার মনে হতেই পারে সে না বললেও তো আপনি Lunch, Dinner- করবেন ই কিন্তু এটা হয়তো ভাবেন-ই না আপনার প্রতি সে কতোটা Caring- কতোটা যত্নশীল।

এই Caring-টাকে আজ আপনার নেকামো, আধিখ্যেতা, ডং, Immature-বলতেই পারেন, মনে হতেই পারে। জানেন তো ভালোবাসার মাঝে Maturity-চলে আসলে সেটা আর ভালোবাসা থাকে না, সাথে যোগ হয় স্বার্থ। তখন আর সেই ভালোবাসা নিঃ স্বার্থ থাকে না। ভালোবাসা মানেই পাগলামো, ভালোবাসা মানেই তার প্রতি যত্নশীল, ভালোবাসা মানেই তার মন বুঝতে পারা, ভালবাসার মানুষকে ভালো রাখা। এই বিষয় গুলো আপনার মনে দাগ কাটবে না। আপনার কাছে নেকামো মনে হবে। কিন্তু একটা সময় বড্ড মিস করবেন এই জিনিস গুলো, সাথে ঐ মানুষটিকেও। আজ যে গুলো নেকামো, ডং বলে অবহেলা করছেন, পাত্তা দিচ্ছেন না দেখবেন কোন রাতে জ্বরের ঘোরে সেই মানুষটিকেই পাশে চাচ্ছেন, তার সেই যত্ন মাখানো ভালোবাসা খুব মিস করচ্ছেন, প্রচণ্ড জ্বরে কপালে তার হাতের স্পর্শ-ই চাচ্ছেন । কিন্তু সেটা অনেক দেরি হয়ে যাবে, আপনার বুঝতে পারার মাঝে অনেক দিনের ফারাক।

গাছ মারা যাওয়ার পর গাছের মূল্য বুঝে লাভ নেই। ঐ সময় গাছ টিকে আর বাঁচানো যায় না। আমাদের ভুলটা এখানেই হয়। আমরা সবই বুঝি কিন্তু দিন শেষে; যখন সময় আমাদের হাতে থাকে না। জীবন থেকে খুব বেশি মূল্যবান সময় চলে যাওয়ার পর, জীবন থেকে সোনালী, ভালোলাগার, ভালোবাসার সময় গুলো হারিয়ে যাওয়ার পর। তখন শুধু আমরা আফসোস করি, সুখ হাতরে ফিরি। কিন্তু সুখ কিন্তু সেই আগেই অবহেলায় পায়ের নিচে পিষে ফেলেছেন। দিন শেষে আমরা সুখি হতে চাই, কিন্তু সুখ কে দূরে সরিয়ে দিয়ে। 

সুখি হতে হলে জীবনের প্রতি বিমুখ না হয়ে তাকে ভালোবাসতে জানতে হয়, ভালোবাসাকে যত্ন নিতে হয়। তবেই প্রতিটা নতুন ভোর একটি নতুন উপহার হয়ে আসে, সুখ বয়ে আনে জীবনে।

MARI themes

Powered by Blogger.