জীবন মানেই আলোয় উচ্ছল, জীবন মানেই জেগে ওঠা, জীবন মানেই প্রাপ্তি - অপ্রাপ্তি, জীবন মানেই হতাশা - বিষণ্ণতা। আজকাল সব কিছুতে কেমন যেন একটা অবসাদ কাজ করে। মাথাটা কাজ করতে চায় না, কেমন যেন একঘেয়েমি চলে আসে । অল্পতেই সব কিছু ঘোলাটে হয়ে যায়। হয়তো জীবন নিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছি, হয়তো জীবন নিয়ে একটু বেশিই ভাবচ্ছি। তবে সেটা আনন্দের না, বেদনায়। কেমন জানি নিজেকে নিঃস্ব মনে হয়, একাকি। কষ্ট গুলো বার বার হানা দেয় স্মৃতির পাতায়। কখনো কখনো তা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আরো বেশি হয়ে যায়। মানুষের জীবনে নাকি এমন কিছু সময়ই আসে যখন হতাশা - বিষণ্ণতা, অবসাদ এক সাথে কাজ করে । হয়তো আমারও তা-ই হয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় বেঁচে থাকার কোন মানে নেই। নিজের কাছে নিজেকে অনেক বড় অচেনা মনে হয়। মনে হয়, পৃথিবীর সব কিছুই প্রবঞ্চনা, সব কিছু মিথ্যা, সব কিছু ভিত্তিহীন। সব কিছু যেন উপহাস করছে।
কষ্ট গুলো এমন, যা প্রকাশ করা যায় না। আবার ঢেকে রাখতে রাখতেও পাথর হয়ে যায়, যা বহন করা যায় না। তাই অনেক দিন ধরে বাঁচার ইচ্ছা করেনা কিন্তু মরতেও সাধ জাগেনা। কেনো এতো বিষণ্ণতা আমি জানি না। শুধু জানি আমার কিছু ভালো লাগে না। রাতের অন্ধকারটাকেও বড়ই অচেনা লাগে, কিন্তু এই অন্ধকারটা আমার অনেক চেনা, অনেক আপন। সোডিয়াম আলোয় নিজেকে মনে হয় এক জ্যান্ত লাশ। এখন আর আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে ওঠেনা আমার রাত্রিরা, আমার মন। বিষন্ন ডানায় ভর করে ওরাও ফিরে যায়। হয়ত মাঝে মাঝে এসে উঁকি দেয়, কিন্তু ধরা দেয় না। হতাশার, বিষণ্ণতার শেষ সীমানায় এসেও আমি বেঁচে আছি, দাঁড়িয়ে আছি শুধু মাত্র একটু আলোর জন্য। এই আলোটা হয়তো অন্ধকার ভেদ করে আলো ছড়াবে না। খুব একাকী মুহূর্তে আধারকেও ভালোবাসি, আধার এর অতলে তলিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়, নির্জনতা কে আকড়ে ধরে থাকতে ইচ্ছা হয়। শুধু নিজের আবেগ-অনুভূতি গুলোকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য; কিন্তু পারি না...। তাই এখন আর এই ব্যার্থ চেষ্টা করি না। এই ব্যার্থতাই আমার অসীম দুঃখ কিংবা সুখ এর অবর্ননীয় স্বাদ গ্রহনে সাহায্য করে। হয়তো, মাঝে মাঝে ব্যার্থ হতেও ভালো লাগে। তবে কি আমি সত্যি ব্যার্থ...!!! শত কষ্টের মাঝেও একাকী নির্জনে হেঁটে বেড়াই অজানা পথের বাঁকে, অচেনা পথের ধারে...।।

কিছু কিছু সময় আসে যখন আমরা বিশ্বাস ও অবিশ্বাস এর সীমারেখায় বাস করি। তখন একই সঙ্গে আমরা দেখতে পাই এবং দেখতে পাইনা। বুঝতে পারি এবং বুঝতে পারিনা। অনুভব করি এবং অনুভব করিনা। সে বড় রহস্যময় সময়।
ভাললাগা - খারাপ লাগা মানুষের উপর নির্ভর করে, অনেকটা সময়ের উপর। হয়তো ১ সপ্তাহ আগেও আমাকে যাদের ভালো লাগতো, আজকে তাদের কারো কারো আমাকে ভালো লাগতেছে না । মানুষের পছন্দ খুব Frequently Change হয় । মানুষের মন খুব সহজেই Motivated হয়।।

আমার চারপাশে যদি ১০ জন 'কাছের মানুষ' থাকে, হয়তো তাদের মধ্যে ২-৩ জন TWO Faced কিংবা Hypocrite . কেউ পিছনে আমার দুর্নাম করে, কেউ পিছনে আমাকে ছুরি মারবে। হয়তো আমি যাকে ফ্রেন্ড ভাবি, সে আমাকে ফ্রেন্ড ভাবে না। হতেই পারে এমন & হচ্ছেও এমন । আমি যাকে Best Friend- হিসেবে মনের শিংহাসনে বসালাম সে হয়তো আমাকে আর দশ জন মানুষের মতোই দেখে। এবং এটা সত্যও...।।

আজকে যে আমাকে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেছে বা ভালোবাসি বলতেছে সে কালকে আমাকে ভালোবাসবে কিনা - সেই নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না । আজকে তুমি আমাকে আমার সামনে Respect- দেখাচ্ছো। কিন্তু কয়েক দিন পর বা কয়েক মাস পর এই তুমিই হয়তো আমাকে গালি দিবে। তখন আর এই সময়টা তোমার মনে পরবে না। তখন তোমার কাছে আমি শুধুই একজন খারাপ মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবো।  তখন মানুষের সামনে আমাকেই খারাপ বানিয়ে, গালি দিয়ে কথা বলবে। তখন আমিই হবো তোমার গালির উদাহরণ। তখন এটা মনে হবে না বা মনে পরবে না যে এই আমাকে পাওয়ার জন্যই তুমি কেঁদেছো, ভালোবেসে জীবন বিসর্জন দিতে চেয়েছো। পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি ১৮০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে যায় ।

সুন্দর সুন্দর কথা লিখে হাজার প্রশংসা করে আমার সামনে কথা বলতো, মুখে মধু নিয়ে যে কথা বলতো , সেই মানুষটাকেই আমি নিজ চোখে দেখেছি আমার দুর্নাম করতে, আমাকে নিয়ে খারাপ কথা বলতে । আমি জানি, এই ব্যাপারটায় আমার খারাপ লাগা উচিত । কিন্তু আমার খারাপ লাগেনি। শুরুর দিকে এইসব ব্যাপারে আমার খারাপ লাগতো, আমি খুব অবাক হতাম । আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হতো, কিছু জানতে ইচ্ছা করতো, রাগ দেখাতে ইচ্ছা হতো ।।
তারপর আমি খেয়াল করলাম,  একটা মানুষের ভালোলাগা বা খারাপ লাগার ব্যাপারটা স্বাধীন, পুরাটাই তার ইচ্ছা ।

আমি খেয়াল করে দেখলাম আস্তে আস্তে কাছের, আপন মানুষ গুলো দূরে সরে যাচ্ছে। আপন মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাদের বাঁধা দিলাম না কারণ আমি তাদের কাছে আপন ছিলাম না। এমনকি তারপর কাউকে নতুন করে যোগও আর করলাম না। আমি একা, এটা নিয়েই রইলাম কারণ একমাত্র এটাই সত্য ।  সব যোগ বিয়োগ করে প্রাপ্তির পাল্লা শূন্য, মাঝে মাঝে মনে হয় মাইনাস।।
জীবনের মোড় ঘোরা, মানুষের রং বদলানো, রুপ বদলানো, পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হওয়া - এই ব্যাপার গুলাকে আমি সহজ ভাবে নিতে শিখেছি। আগে পারতাম না সহজ ভাবে নিতে কিন্তু এখন পারি ।।

যে মানুষটার সাথে দেখা হলে আগে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলতো, সে এখন চোখে চোখ পড়লে চোখ সরিয়ে নেয়, না দেখার ভান করে চলে যায়। এই ব্যাপারটায় আসলে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। এই ব্যাপারটাকে পাত্তা দেওয়ারও কিছু নাই।

আমার জীবনে সেই মানুষ গুলোই থাকবে, যারা আমাকে বোঝে । আর যারা চলে যায়, তারা আমাকে বুঝতে ব্যর্থ। বুঝতে ব্যর্থ হওয়া মানুষদের নিয়েই আমরা বেশি ভাবি, বেশি আবেগ দেখাই।

দিন শেষে, আমাকে আমার গন্তব্যে পৌছাতে হবে । সময়ের মধ্যেই পৌছাতে হবে। আমার পাশে কেউ থাকুক বা না থাকুক, আমাকে কেউ ভালো ভাবুক আর খারাপ ভাবুক, আমাকে কেউ কেয়ার করুক আর নাই করুক। আমাকে হাঁটতে হবে, অনেকটা পথ হাঁটতে হবে, গন্তব্যে পৌছাতে হবে। আমার হাঁটা কেউ হেঁটে দিবে না।।

MARI themes

Powered by Blogger.