কতো গুলো বিষয় কিন্তু ভাষায় ব্যক্ত করা যায়না এর মধ্যে চমৎকার একটা জিনিস হলো যেকোনো ধরনের মানসিক অনুভূতি। এই যেমন -আনন্দ কি , মিষ্টি অনুভূতি কি ? এগুলো ভাষায় প্রকাশ দেয়া দুষ্কর। তবে, অনেক কবি-সাহিত্যিকই চেষ্টা করেন প্রকাশ দেওয়ার। যেমন আনন্দের ক্ষেত্রে হয়তো বলবেন "আনন্দ হলো সাগরের উপর দিয়ে উড়ে চলা পাখি ...কিংবা সাগরের বিশাল চোখ । অথবা, শিশির ভেজা ঘাসের উপর একফোটা শিরির কণা।" বা আরো ভয়ংকর কিছুও হতে পারে।

রাগ আর অভিমান ভিন্ন দুটি মানসিক অনুভুতি। রাগের সাথে হিংসাত্মক মনোভাব জড়িত থাকে। রাগ হলে একজন মানুষ অনেক কিছু করতে পারে। রাগ দুই ধরনের হয়; প্রকাশিত রাগ এবং অপ্রকাশিত রাগ। যারা রাগ সহজেই প্রকাশ করে তারা সাধারণত ভাল মানুষ হয়ে থাকে, আবার কিছু মানুষ আছে যারা রাগ প্রকাশ করে না কিন্তু গোপনে অনেক বড় ক্ষতি করার জন্য তৈরী থাকে। রাগ কাছে বা দুরের দুই ধরনের মানুষের সাথেই করা যায়। তবে কাছের মানুষের সাথে রাগ করলে সে রাগ আসতে আসতে অভিমানে পরিণত হয়, সেখানে থাকে কিছুটা ভালোবাসাও, কিছুটা অভিমানও।

অভিমান; রাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি অনুভুতি। কাছের লোকের উপরই কেবল অভিমান করা যায়। অভিমানের ক্ষেত্রে কারো উপর কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে ,সেই সাথে থাকে কিছু কষ্ট। আর রাগের ক্ষেত্রে এসব কিছু নেই, শুধু রাগই থাকে। রাগের ক্ষেত্রে  কোন কষ্ট থাকে না। কিন্তু অভিমান বিষয়টা ভিন্ন; খুব আপন মানুষের সাথেই শুধু অভিমান করা যায়। এতোটাই আপন যে অভিমানটা ভেঙ্গে দিতে পারে।   অভিমানের সাথে অধিকার নামক একটি ব্যাপার থাকে, অর্থাৎ যার উপর অধিকার আছে তার সাথেই শুধু অভিমান করা যায়। যার কাছ থেকে কিছু পাবার আশা আছে,অথবা যাকে কিছু দেবার আশা আছে অভিমান তো তারই উপর করা যায়।

অভিমান এবং রাগের মাঝে সবচেয়ে বড় একটি পার্থক্য হলো; অভিমান শুধুমাত্র কাছের মানুষের উপরেই করা যায় কিন্তু রাগ যেকোনো ব্যক্তির সাথেই করা যায়।অভিমানে লুকিয়ে থাকে সুপ্ত ভালোবাসা, অনুযোগ, প্রাপ্তির আশা, কিছুটা অভিনয়। কিন্তু রাগে মিশে থাকে প্রচন্ড ক্ষোভ, অজ্ঞতা, প্রত্যাশা, হিংসা বা প্রতিহিংসা। অভিমানে একটা সময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবার আকাঙ্খা থাকে এবং ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আগের চেয়ে আপনত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু রাগে প্রতিশোধ গ্রহণের ইচ্ছা থাকে। একটা সময় রাগটা চলে গেলেও মনে একটা দাগ রয়েই যায়। অভিমানে মিশে থাকে মনের হাজারও ভালোবাসা, হাজারও অনুভূতি; কিন্তু রাগে সে রকম কিছুই থাকে না।

কষ্টের বিষয়টা এই দু’টো অনুভূতি এর উপরই নির্ভর করে। এর সংজ্ঞাটা একটু ভিন্ন। কষ্ট তখন হয় যখন কিছু প্রত্যাশা করে পাওয়া যায় না, হোক সেটা অতি ক্ষুদ্র, অতি নগণ্য। প্রত্যাশা কিন্তু সবার কাছে করা যায় না। প্রত্যাশা তাদের কাছেই করি যাদের আমরা আপন ভাবি, যাদেরকে আমরা আপনত্বের অধিকার দিয়েছি। আর যখন এই ক্ষুদ্র ইচ্ছা, আশা, প্রত্যাশা অপুর্ন রয়ে যায় তখন তার প্রতি মনে এক ধরনের অভিমানের সৃষ্টি হয়, এক ধরনের কষ্টের অনুভূতি হয়। এই কষ্টের অনুভূতি থেকেই কষ্টের সৃষ্টি হয়। কিন্তু যার উপর আমরা রাগ করি সেখানে তেমন কষ্ট থাকে না বা এমন কষ্ট থাকে যা অসীম। খুব কম - খুব বেশি এই দু’টো জিনিসই একটা সময় বড় কিছু ঘটার জন্য দায়ী থাকে।।

সম্পর্কের সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়, ব্যাক্তি ভেদে সংজ্ঞা ভিন্ন হয়। সম্পর্ক মানেই শুধু একটি ছেলে মেয়ের মাঝে ভালোবাসা তা কিন্তু হয়। সম্পর্ক বাবা- মা, ভাই - বোন, বন্ধু সবার সাথেই। কিন্তু এই সম্পর্ক গুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হয়, কোন সম্পর্কের সাথে কোন সম্পর্কের মিল নেই। বাবা- মা'র সাথে যে সম্পর্ক আর ভাই-বোনের সাথে যে সম্পর্ক সেটা কখনোই এক নয়। কিন্তু আমরা অনেক সময় সম্পর্কের তুলনা করে ফেলি আর যার ফলে অনেক ভুল কিছুর মুখোমুখি হই।

যখন তুমি একটা মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়াবে, তখন তার ভালো দিক এবং খারাপ দিক এই সব কিছুই তোমার সাথে জড়িয়ে যাবে। তার সব কিছুই তখন তোমার ভাললাগবে কিন্তু ঐ জিনিস গুলো অন্য কারো মাঝে থাকলেও তা ভাললাগবে না। ঐ মানুষটার ভালো দিক গুলো যেমন তোমাকে ভালো অনুভূতি দিবে, মানুষটার খারাপ দিক গুলোও তোমাকে কষ্ট দিবে...এটাই নিয়ম। কারণ তার সব কিছুই তোমার উপরও বিরাজ করবে, তোমার মনেও ঘটবে, তোমার মনকেও নাড়া দিবে, মনে সুখের আবেশ ছড়াবে, কষ্টের অনুভূতি দিবে।

নিরবচ্ছিন্ন, একটানা, স্থায়ী সুখ কোথাও নেই। সুখের পর কষ্ট, কষ্টের পর সুখ আসবে এটাই নিয়ম, এটাই বাস্তবতা। একটা মানুষের কাছ থেকে তুমি দিনে ২৪ ঘন্টা টানা ভালো ব্যবহার নাও পেতে পারো। ব্যস্ত পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু ঘটতে থাকে, ঘটে যার কারণে একটা মানুষের মাথা ঠান্ডা থাকে না, মাথা ঠিক থাকে না। এটা বুঝতে হবে।
আশেপাশের পরিস্থিতির জন্য অনেক সময় মানুষ ভুল আচরণ করে। জীবনে বহুবার বহু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।।এই পরিস্থিতিটা কাছের মানুষ গুলোকে জানতে হয়, বুঝতে হয় এবং সেই অনুযায়ী React করতে হয়। এইটুকু না বুঝলে কাছের মানুষ আর বাহিরের অপরিচিত মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। যারা কাছের মানুষ তাদেরকে না বললেও বুঝে ফেলে এর পিছনের কারণটা, পরিস্থিতিটা।

যখন তোমার কাছের মানুষটা তোমার সাথে ভুল কোন আচরণ করছে, অস্বাভাবিক কিছু বলছে তখন বোঝার চেষ্টা করো কেন এমন করছে, এর পিছনের কারণটা কি।  রাগের বিপরীতে রাগ করা কখনোই কোন সমাধান নয়। পরে মাথা ঠান্ডা হলে তাকে বুঝাও, সে বুঝবে। তাকে না বুঝালেও মাথা ঠান্ডা হলে, পরিস্থিতি ঠিক হলে সে এমনিতেও বুঝবে।
শুধুমাত্র কথা কাটাকাটি কিংবা ঝগড়ার কারণে আমি বেশ কিছু সুন্দর সম্পর্ক ভাঙতে দেখেছি। খুব তুচ্ছ কারণে সম্পর্ক ভেঙ্গে গিয়েছে। অনেক ভালো সম্পর্ক, অনেক ভালো বন্ধুত্ব এই ছোট ছোট ভুল বোঝাবোঝির জন্য চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছে।

আমি খুব অবাক হই, বিষ্মিত হই। রাগ, ঝগড়া, কথা কাটাকাটি - এগুলো ছাড়া কোন সম্পর্ক হয় না। আর এগুলোর জন্যই সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে...!!! যেই মা-বাবা এর সাথে আমাদের সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক, তাদের সাথেও ছোটবেলা থেকে অনেকবার অনেক রাগারাগি, কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে। জীবনে বহুবার চিন্তা করেছি, বাসা থেকে চলে যাবো। পারি নি, কেউই পারবে না।। চলে যাওয়া কি এত সহজ ; এতো বড় একটা সম্পর্কের বাধন ছিঁড়ে...??!!

যে মানুষটা সামান্য রাগের কারণে, কষ্টের কারণে, তর্কের জন্য কাছের মানুষটাকে কে ফেলে রেখে চলে আসে, সে আসলে কি চায় ?? সে নিরবচ্ছিন্ন সুখ চায়। সে চায়, কেউ কোনদিন তাকে রাগ দেখাবে না, তাকে কষ্ট দিবে না। সে একজন খাঁটি শুদ্ধ মানুষ চায়। সে একজন Perfect মানুষ চায়।।
বিশ্বাস করুন, পৃথিবীতে কোন Perfect- মানুষ নেই। আপনি আজকে মানুষটার সামান্য ভুলের জন্য তাকে ছেড়ে অন্য কোথাও  সুখ খুজছেন ?? খুব বড় ভুল করছেন...।।
সোনা (Gold) যেমন 24 caret- এ গয়না হয় না যদি একটু খাঁদ না মিশানো হয়। মানুষও তেমনি; দোষ- ভুল নিয়েই মানুষ। শুদ্ধি মানুষ বলতে কিছু নেই।
তন্নতন্ন করে খুঁজেও তুমি কোথাও কোন Perfect মানুষ পাবে না। এই মূহুর্তে তোমার কাছে যাকে Perfect মনে হচ্ছে সময় গড়ালেই দেখবে, কোথাও না কোথাও তার কোন দোষ অবশ্যই আছে, কিছু ভুল অবশ্যই বের হবে। Satisfaction- জিনিসটা একান্তই তোমার নিজের, তোমার ব্যাক্তিগত। তুমি কিসে, কিভাবে Satisfied- তা একমাত্র তুমিই জানো। আর এই Satisfaction- জিনিসটাই তোমার মনের যোগান দিবে, মনকে মানাবে।

আমি কলাম বা ছন্দ লিখতে পারি না। তারপরও আজকে আমি যা লিখবো এটাকে কলামই বলবো। কারণ, আমি কলাম লিখতেই বসেছি; কলাম না হলেও এটাকে আমি কলাম-ই বলবো।

আজ আমি শুধু আমার কথাই বলবো। আমি আমার জীবনের কথাই বলবো আজ। আমি আমার গল্প লিখার গল্পই লিখবো। আমি লিখি আমার বাক্সবন্দী জীবনের কথা গুলো। আমার এলোমেলো অনুভূতি গুলোকে স্মৃতির অন্তরালে সাজাই অক্ষরে অক্ষরে। চেষ্টা করি ভালো ভাবে লিখার। কতটুকু হয় কে জানে...! এছাড়াও আমি লিখি আমার ভালোবাসায় ঘেরা মানুষদের নিয়ে। যারা আমাকে স্নেহ করেন, যারা আমাকে পথ চলতে সাহায্য করে, যারা আমাকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখায় তাদের কথা। আমি লিখছি আমার যাবতীয় জীবনের কথা, সময়ের কথা। এমনি ভাবেই চলছি। দেখি কতদূর যেতে পারি।

মূলত আমি লিখি আমার জন্য, মনের ভাব প্রকাশের জন্য। আমি যখন আরও বড়ো হবো অর্থাৎ বুড়ো হবো তখন আমি আমাকে খুব ভালো ভাবে উপলদ্ধি করতে পারবো। দেখতে পারবো নিজের মত করে। এছাড়া আমি যখন থাকবো না তখন আমার লিখা গুলো ঠিকই থাকবে। আমার প্রতিটা মন খারাপের, প্রতিটা মুহূর্তের, প্রতিটা সময়ের সাক্ষী থাকবে এই লিখা গুলো।  তখন হয়তো কেউ হাসবে, কেউ দুঃখ পাবে, কেউ উপহাস করবে। আরো অনেক কিছু করতে পারে যা আমার ধারনা নেই। যা ইচ্ছে করুক, আমার সমস্যা নেই। আমি লিখতেই থাকবো, হোকনা তা পড়ার অযোগ্য বা মনে রাখার মতো না। আমি আমার পৃথিবীটাকে সাজাবো আমার মত করেই, আমার নিজের মতো করে।

সময়ের টানে, সময়ের প্রয়োজনে গিয়েছি অনেক জায়গায়। কত জনপদ, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন চেতনার মানুষ আর ভিন্ন রঙের মানুষের সাথে দেখা, পরিচয়, কতো কথা। কিন্তু তারপরোও আমার পৃথিবী ঠিক আগের মতই। শুধু পাশে যোগ হয়েছে ছোট্ট একটি নদী। যখনই মন খারাপ হয় চোখ বন্ধ করে হারিয়ে যাই আমার পৃথিবীতে। আমার হারিয়ে যাওয়া মুহূর্ত গুলো, হারিয়ে যাওয়া; বদলে যাওয়া প্রিয় মুখ গুলোকে আঁকার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে ভাবি আমার আপন, কাছের মানুষের সংখ্যা এতো সীমিত কেন, এতো কম কেন, হাতে গোনা কয়েক জনই কেন। তারপরেও আমি চেষ্টা করি আমার বাইরের জগতটাকেও দেখতে। হয়তো জাগতিক নিয়মে আমি ফুরিয়ে যাবো একসময়। এটাও আমি  জানি আমার চোখের আলো ম্লান হয়ে যাবে একদিন, শেষ হয়ে যাবো একদিন। কিন্তু আমার পৃথিবীকে দেখার জন্য প্রয়োজন মনের চোখের আলো, আর তার উজ্জ্বলতা কখনোই ম্লান হবে না, শেষ হবে না। আজো আমি আমার পৃথিবীকে দেখছি। ঘন নীল আকাশ, কাশফুলের ঢেউ সবুজ জমিনের উপর। পাশে বয়ে চলা ছোট্ট একটা নদী। হয়তো একটি সময় আমি আর এগুলো দেখতে পাবো না, পারবো না কিছুই অনুভব করতে।

আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লিখা গুলো নিতান্তই আমার জন্য। সেদিন হয়তো আমি থাকবো না কিন্তু এই লিখা গুলো থাকবে।
আমাকে হয়তো ঝড়া পাতার মত পুড়িয়ে ফেলবে, পুতে ফেলবে। কিন্তু আমার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লিখা গুলো ঠিকই আমার সাক্ষ্য বহন করবে। আমি একজন ছিলাম; হয়তো নগণ্য, অতি ক্ষুদ্র। তবু আমি ছিলাম; তাই আমি আশাবাদী। আল্লাহ্‌ হয়তো আমাকে এতোটা নিরাশ করবেন না।

MARI themes

Powered by Blogger.