অনেক দিন যাবৎ-ই লিখা হয় না, হয় না বললে ভুল হবে, লিখতে পারি না। কেন লিখতে পারি না সেই ব্যাখ্যায় যদি যাই তাহলে প্রথমেই আসবে লিখতে ইচ্ছা করে না। কিছু লিখার জন্য মনের যে ইচ্ছা, আশা, আগ্রহ দরকার হয় সেটা আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে। মাথাটা অন্য কোন কিছুতে খুব বেশি Occupied হয়ে আছে। 

একটা সময় ছিল মাসে ৩-৪ টা ব্লগ লিখা হয়ে যেতো, এখন মনেই পরে না লাস্ট কবে ব্লগ লিখেছিলাম। চাইলেও মনে করতে পারি না। হঠাৎ কেন এমন হল তার ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম লেখালেখিটা আসলে মনের একটা ভাললাগার জায়গা থেকে আসে। এই লেখার আগ্রহটা নির্ভর করে আশেপাশের পরিস্থিতি, মনের অবস্থা, মানসিক ভাবে কতোটা শান্তিতে থাকা হয় তার উপর। একটু খেয়াল করে দেখলাম লাস্ট কয়েক বছর যাবৎ আমি মানসিক ভাবে এতো বেশি Occupied হয়ে আছি যে, Job, Corporate life balancing, Family issues এসব ছাড়া আর কিছুই তেমন ভেবে লক্ষ্য করা যায় না। 

জীবনটা বড়ই ধীরগতি আর যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। কোন ব্যস্ততাই আমাকে স্পর্শ করে না, মাঝে মাঝে মনে হয় এতো বেশি ব্যস্ত থাকি যে ব্যস্ততাও আমাকে দেখে অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কোন কিছুতেই কোন আকর্ষণ বোধ করি না। কেমন জানি উদাস উদাস মনে হয় সব সময়। হয়তোবা এটা উদাসীন হওয়ার ই সময় । জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে এতগুলো অধ্যায় দেখে এখন অনেকটাই আশাহত। আমি আমার আমিকে হারিয়ে ফেলেছি অনেক আগেই। এখন শুধুই খোঁজার চেষ্টা করছি নিজেকে সেই আমার আমিকে।

আমি এক স্বপ্নকথক, চলেছি অজানার উদ্দেশ্যে। আমার কিছুই বলার নেই। তারপরেও, অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বলার সাহস পাই না। অসীম শূন্যতার মাঝে সামনের দিকে চলা একাকী এক নাবিক। আমার আমি'কে নিয়ে সামনে চলা, এক নিরন্তরের পথে! হাজারো মানুষের ভিড়ে একজন মানুষ, এখনো জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাইনি। বেঁচে আছি, বেঁচে থাকতে হয় বলে। আমি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা স্বপ্ন খূঁজে ফিরি। স্বপ্নেই খুঁজে বেড়াতাম নিজেকে। ঘুমহীন চোখে স্মৃতির রাজ্যে নিরন্তর অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি । কখনো কখনো খুঁজে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলেছি। গন্তব্যহীন পথে উদ্ভ্রান্ত পথিকের মতই আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছি।

এক সময় নিজেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বপ্নের মাঝে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখলাম আমি মিথ্যে স্বপ্নের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছি, সপ্ন আর বাস্তব এক না। জীবনের এই মুহূর্তে এসে হিসেব করে দেখলাম, পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াই বেশি। আশারা তাচ্ছিল্যভরে তাকিয়ে থাকে, আর নিরাশাও মুখ ফিরিয়ে নেয় চরম নির্মমতায়। আশা পূরণের আনন্দে আপ্লুত হয়ে উচ্ছ্বসিত কথোপকথনকে আজ আমার বাতুলতা মনে হয়। মনে হয় আশা শুধুই বৃথা। সব মিলিয়ে জীবন যেন দিন দিন মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে ধূলো বালি, তপ্ত,উত্তপ্ত, তৃষার্ত। এই আমি খুঁজে বেড়াই সামান্য মেঘ, সামান্য বৃষ্টি।খুঁজতে খুঁজতে আমি হতাশ,  ক্লান্ত।

জীবনটা মনে হয় এরকম-ই...
যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না...॥


কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।

একজন মানুষ হিসেবে আমাদের পক্ষে খুব কঠিন ভিন্ন আরেকজনের মানসিক কষ্ট বুঝে, সত্যিকার অর্থে তা অনুভব করা। অধিকাংশ মানুষ এটি বুঝেই না যে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে কেন লোকে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। অনেক রোগী ডাক্তারদেরকে বলেছেন যে, তারা যখন আত্মহত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তাদের নিজেদের ব্যথাটাই এত বেশি ছিল যে তখন তারা তাদের প্রিয়জনদের কথা ভাবেনি। মনে হতেই পারে এটা খুব স্বার্থপরের মতো আচরণ। কিন্ত আসলে তা নয়। মানুষ আত্মহত্যা করে শুধু নিজে পালিয়ে বাঁচার জন্য। সে আসলে নিজে বাঁচার উপায় হিসেবেই মৃত্যুকে বেঁচে নেয়। এদের চলে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকলেও, মূল কারণ কিন্তু একটাই, আর সেটা হচ্ছে মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা এবং হতাশা। যা তারা বহন করতে পারেনি। আমরা সবাই এখন এক অর্থহীন দৌড় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে জীবন মানেই অর্থহীন লোক দেখানো ছুটে চলা। এই অস্বাভাবিক ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের হতাশা ও বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। হতাশা মানুষের সৃজনশীলতা, বিবেকবোধ ও বুদ্ধিমত্তা নষ্ট করে দিচ্ছে। পরিবারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মানুষকে আরও চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

মানসিক চাপকে আমরা খুব ভারী বা মোটামুটি ভারী কোনো জিনিসের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। মোটামুটি ভারী কোনো জিনিস আমরা নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত হাতে ধরে রাখতে পারব। এখানে জিনিসটির ওজন কোনো ব্যাপার নয়। ব্যাপার হচ্ছে আমরা কতক্ষণ এটি ধরে আছি। যত বেশি সময় ধরে থাকব, তত বেশি হাতটা অবশ হতে থাকবে। এই ভারী জিনিসটির মতোই হচ্ছে মানসিক চাপ। প্রচন্ড কোনো মানসিক চাপ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা সহ্য করে নিলেও নিতে পারি, কিন্তু সেই চাপের সময়সীমা দীর্ঘস্থায়ী হলেই বাঁধে বিপত্তি। মানুষ তখন সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। এরকম কোনো এক পর্যায়েই মানুষ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

অনেকসময় অন্যের মন খারাপকে আমরা পাত্তা দেই না। ভাবি হয়ত এটি সামান্য ব্যাপার, সাধারণ মন খারাপ। কিন্তু এভাবে চিন্তা করা মোটেও ঠিক নয়। চরম হতাশায় থাকা ব্যক্তির প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। অস্বাভাবিক চাপের মুখোমুখি হয়ে অনেকেই আত্মহত্যার কথা ভাবে কিন্তু সেই ভাবনাটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাময়িক ভাবনা। তবে এই ভাবনাটাই যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তখুনি রোগী তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়।

জীবনকে উপভোগের জন্য খ্যাতি-বিত্ত নয়, সস্তা বিনোদন কিংবা একঘেয়েমি জীবন নয়, বরং আনন্দের যে পথটা সেটা জানা দরকার, বুঝা দরকার। সেই পথ জানা থাকলে আপনাকে আর আত্মহত্যা করতে হবে না। জীবনে চলার পথে আত্মবিশ্বাস খুবই দরকার। আপনি চলে গেলে মানুষ ভুলে যাবে, পরিবারে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। অথচ আপনি যদি সমাজের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন, নিজের মতো বাঁচতে পারেন তবে এই সমাজ, এই মানুষগুলোই মনে রাখবে আপনাকে।

শুধু একটাই ব্যাপার, এই সময়টা একজন প্রিয় মানুষের উপস্থিতি লাগে, যে সময়ে অসময়ে পাশে থাকবে। মানসিক সাপোর্ট দিবে, পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করবে।প্রতিটা মিনিট, ঘন্টা আমার কেয়ার নিতে ব্যস্ত থাকবে। সে কখনো আমায় ভুল বোঝবে না অহেতুক এই হঠাৎ মন খারাপের জন্য প্রশ্ন তুলবে না। মন খারাপের সময় বারবার মন খারাপের কারন জানতে চেয়ে আরও মন ভারী করে দিবে না। বরং আমার সময়টাকে রিকোভার করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। বাস্তবতা ভিন্ন, বাস্তবতা কল্পনার মতো নয়।



মাঝে মাঝে আমরা অন্যকে ভালোবাসতে গিয়ে নিজেকেই ভালোবাসতে ভুলে যাই। মানুষটাকে উজার করে ভালোবাসা দিতে গিয়ে নিজের বলতে আর কিছু থাকে না। ভালোবাসার মানুষের কাছে আমরা নিজেদের তুচ্ছ করে ফেলি। মনে হয়, আর কিভাবে ভালোবাসলে সে আমাকে ছেড়ে যাবে না, সে শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। নিজেকে তুচ্ছ করতে করতে নিজের সবটুকু মানুষটার কাছে বিলিয়ে দেই, নিজের বলতে তখন অবশিষ্ট কিছুই থাকেনা। নিজের প্রতি ভালোবাসা তো দূরের কথা, তার কাছে আত্মসম্মান বোধটুকুও আর থাকেনা। এই অবস্থায় মানুষটা যখন ছেড়ে চলে যায়, তখন কারো সাধ্য থাকেনা নিজেকে নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর।

বলছি না, ভালোবাসতে কৃপণতা করতে। এটুকু বলছি, কাউকে ভালোবাসতে হলে, কাউকে সম্মান দিতে হলে, নিজেকে আগে ভালোবাসো। নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে কাজ করো। যখন নিজেকে সম্মান দিতে জানবে না, নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যাবে তখন অন্য আরেকজনের কাছ থেকে ভালোবাসা,সম্মান কিভাবে আশা করবে। যে তোমাকে সন্মান দিতে জানে না, সে আর যাই হোক তোমাকে সে ভালোবাসে না। তার সাথে তুমি কখনোই ভালো থাকবে না, নিজের সবটা উজার করে দিলেও না। 

নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন, নিজের যত্নটা নিজেকেই বুঝতে হবে। কারণ, জীবনের অনেকটা সময় থাকে শুধু নিজের জন্যই বাঁচতে হয়। নিজেকে নিয়ে মাঝে মাঝে একটু বসতে হয়, নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে হয়; আমি কি ঠিক আছি ? যা করছি ঠিক করছি তো ? উত্তরটা সহজে মিলে, কাজটাও সহজ হয়। জীবন তো একটাই, একান্ত আমার নিজের, এখানে হাজার মানুষের মতামত, ভালোলাগা-মন্দলাগার থেকেও বেশি প্রয়োজনীয় আমার নিজের ভালোলাগা-মন্দলাগা। কারণ, দিন শেষে তোমার মনের খোঁজটা তোমাকেই নিতে হবে। চোখের পানি গুলো তোমার গাল বেয়েই ঝড়বে। 

সোডিয়াম বাতি আর ভালোবাসার মায়ায় জড়িয়ে আবার কবে মধ্যরাতে গল্প করতে করতে হারিয়ে যাওয়া হবে তা আমরা কেউই জানিনা। হঠাৎ করে একদিন "নেই" হয়ে গেলাম... কী হবে তখন ? পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যাবে, আকাশ ভেঙে পড়বে, সবাই খুব কাঁদবে, প্রিয় মানুষটি তোমার ভাবনায় পাগলের মত হয়ে যাবে, আজীবন আপনার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে জীবন কাটিয়ে দেবে? সত্যি কথা হচ্ছে, কিছুই হবে না! কিচ্ছু না। পৃথিবী যেমন ছিল, সেভাবেই চলবে। কেবল তোমার জীবন বাদে বাকি সকলের জীবনই সামনে দৌড়াবে। যাদের সাথে বাস করতে পরিবার, বন্ধু, প্রিয়জন- কয়েকটা দিন তাঁদের খারাপ লাগবে খুব। কিছুদিন হায়-আফসোস হবে, সামাজিক ব্যাপার গুলি ঘটবে..।
তারপর---

এসব আয়োজনের মাঝে কোন এক ফাঁকে টুক করে তুমি স্মৃতি হয়ে যাবে, দেয়ালে ঝোলানো ছবি হয়ে যাবে। সবাই ভুলে যেতে শুরু করবে, তুমি হয়ে যাবে অতীত। প্রিয়জনেরা কেউ ভাগ্যের পরিহাস হিসাবে মেনে নেবে, কেউ কেউ আরও কিছুদিন মনে মনে অপেক্ষা করবে তোমার ফিরে আসার। তারপর একটা সময় এমন আসবে- যখন কেউ আর অপেক্ষাও করবে না ! বিলিভ মি, এটাই হবে...। 

কিছুদিন বাদে সবচাইতে প্রিয় মানুষটিও শোক ভুলে কিছু একটা নিয়ে খুব হাসবে, তোমার প্রিয় খাবারটি পেট পুরে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে। তাঁর মনেও পড়বে না যে তুমি নেই, তুমি হারিয়ে গেছো, না জানি কোথায় কেমন আছো ! আরো কিছুদিন বাদে তোমার প্রিয় মানুষটিরো আরেকজন প্রিয় মানুষ হবে, তুমি হয়ে যাবে প্রাক্তন, কিংবা প্রাক্তনের স্মৃতি ! লিখে রাখো- জীবনে কোন কিছুই চিরস্থায়ী না। আর প্রিয়জন...!!? প্রিয় থেকে অপ্রিয় হতে সময়ের ব্যবধানে সর্বোচ্চ কয়েকটা সেকেন্ড। 

পৃথিবীতে কেবল একটা জিনিসই সত্য... মৃত্যু। কিংবা ফুরিয়ে যাওয়া, নেই হয়ে যাওয়া...


যখন আপনি কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবেন তখন খুব ভালোভাবে ভেবে নিবেন যে মানুষটাকে আজ আপনার জীবনের সাথে জড়াচ্ছেন তাকে কতোটা নিজের করতে পারবেন। বিশেষ করে সমবয়সের করো সাথে জড়ালে। 

বিয়ের সময় যদি আপনার মনে হয় আপনার পরিবার না চাইলে সেই মানুষটার সাথে সারাটা জীবন থাকা সম্ভব না তবে আপনার জন্য সম্পর্কে না জড়ানোই শ্রেয়। আপনি তাকে ভালোবাসেন সব জেনে বুঝেই, বিয়ের সময় যদি প্রশ্ন আসে আপনার বিয়ের কাবিন এতো টাকা হতে হবে, নাহলে লোক কি বলবে, পরিবার মানবে না কাবিন কম হলে, এই টাকায় সংসার চলবে না, সে কি আপনার খরচ বহন করতে পারবে কিনা..এরকম আরো অনেক প্রশ্ন...

যে ছেলে আপনার সমবয়সি তার পক্ষে নিজে ইনকাম করে ২০ লাখ টাকা কাবিনের টাকা পরিশোধ করে বিয়ে করা সম্ভব না, যে আপনার সমবয়সী তার পক্ষে বিয়ের শুরু তেই আপনাকে বিলাসিতায় রাখা হয়ত সম্ভব না, তার কাছে এটা এক্সপেক্ট করাটা ঠিক হবে না সে মাসে লাখ টাকা ইনকাম করবে আর আপনাকে রানীর মত রাখবে, সে অবশ্যই আপনাকে রানীর মতই রাখবে কিন্তু সেটা সে যে টাকা ইনকাম করে সেই টাকার মধ্যে। 

তার প্রতি আপনার ভালোবাসা, তাকে আপনি কতোটা বুঝেন, তার বর্তমান পরিস্থিতি কতোটা বুঝেন সেটার উপর নির্ভর করবে এই প্রশ্ন গুলো আপনার মাঝে আসবে কিনা...আপনি বলতেই পারেন জীবনের নিশ্চয়তা ভাবা কি অন্যায়...? অবশ্যই না, তবে ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রে সেটা ভাবা টা যুক্তি সঙ্গত কিনা সেটা একটু ভেবে দেখা জরুরী। ভালোবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গী করে পাচ্ছেন এটার চেয়ে যদি অন্য কিছুতে অনিশ্চয়তায় আপনার মনে চলে আসে তাহলে ভালোবাসাটা প্রশ্নবিদ্ধ। তাহলে আপনার এমন কাউকে ভালোবাসা উচিত ছিল যে সব দিক থেকেই আপনার যোগ্য, আপনার জন্য পারফেক্ত। ভেবে দেখুন তো যে মানুষটাকে আজ আপনি এরকম কথা হাসির ছলে বললেন সে হয়তো আপনার জন্য ব্যাটার কিছু করতে বাকি সব কিছু দূরে ছুড়ে ফেলেছে। সে হয়তো এমন কিছুর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যা আপনার অজানা। আপনার এই হাসির ছলে, মজা করে বলা কথাটি শুনার পর তার দীর্ঘশ্বাস, তার অসহায়ত্ব হয়তো কখনো আপনার চোখে পড়বে না। একটা ছেলেই শুধু জানে এই কথা গুলো কতোটা ব্যথিত করে তাকে, কতোটা অসহায় বোধ হয় তার মাঝে। এমন অনেক কিছু হয়তো আছে যা আপনাকে সে বলেই না আপনি তাকে অযোগ্য ভাববেন এই ভেবে। জীবনের কেউই পেরফেক্ত না, কিন্তু যে যাকে চায় তাকে সে নিজের মতো পেরফেক্ত করে নেন। আর কেউ হাত ছেড়ে অন্য কারো হাত ধরেন। আজকে যাকে অযোগ্য, পারফেক্ত না বলছেন কালই হয়তো সে পারফেক্ত, যোগ্য একজন মানুষ হয়ে যাবেন। শুধু সময়ের পার্থক্য...কিন্তু আপনার কাছ থেকে তার খারাপ সময়ের এই কথা গুলো তার মনে ঠিকই গেঁথে থাকবে। 

আপনাকে নিয়ে কয়েকশো বছরের অগ্রিম দেখা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার যন্ত্রনা সহজে মেনে নিতে পারে না সে,  কখনোই না, কেউ-ই মেনে নিতে পারে না। কাউকে ভালোবাসার আগে অন্তত একবার হলেও ভাবুন এই মানুষটি কেই নিজের ভাবতে পারবেন কিনা, তার সবকিছুকে মেনে নিতে পারবেন কিনা...।







মানুষ যত বেশি নিজেকে চিনতে থাকে,
ভিড় থেকে ততো বেশি দূরে সরে যায়।
অতিরিক্ত লোকজন ভাললাগে না তার,
অযথা মাতামাতি এড়িয়ে যায়।
অপ্রয়োজনীয় কথায় মন বসে না বেশিক্ষণ।
কাউকে কাছে ঘেষতে দেয় না- বরং দূরে ঠেলে দেয়।

ওরা একটা মুক্ত জেলখানার মতো হয়ে যায়,
দরজা বিহীন, দেয়াল বিহীন একটা মুক্ত জেল খানা।
সহজেই পালিয়ে যেতে পারে কিন্তু তাও সেখানেই আটকে রাখে সেখানে।
ওরা হুটহাট কারো সাথে কথা বলে না,
আবার যাদের সাথে বলে- সেখানে কথা শেষই হয় না।

আসলে ভিতর ভিতর নিজের সাথে ওরা এতো বেশি কথা বলে-
বাহিরে তার খুব সামান্য অংশই প্রকাশ পায়।
ওরা মাঝে মাঝে চলে যেতে চায়-
চলে যেতে চায় কোন এক অচেনা শহরে।
যেখানে কোন পরিচিত মুখ নেই।
এই শহরে অনেক পরিচিত মুখ-
অপরিচিত মুখ হয়ে সে ঘুড়ে বেড়ায়।

ওরা নিজের সাথে খুব সাচ্ছন্দ বোধ করায়-
অন্যের সাথে মিশে যেতে পারে না-
কিন্তু একবার মিশে গেলে ওদের থেকে ভালো সঙ্গী পাওয়া দুষ্কর।

ওরা নানা বিষয় নিয়ে পারদর্শিতার সাথে আলোচনা করতে পারে-
বাহ্যিক পৃথিবী ছাড়াও ওদের আলাদা একটা জগত থাকে।
যেখানে খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখে ভালোবাসা।

ওরা অসুস্থ বা মানসিক রোগে আক্রান্ত নয়-
ওদের সমস্তটা একটা বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে রাখে,
বাঁধ খুলে দিতে পারলে দূর_দুরান্ত পর্যন্ত ভিজিয়ে দিতে পারে।
তফাৎ ওই বাঁধ সবাই খুলতে পারে না।
হ্যাঁ, ওই বাঁধ  সবাই খুলতে পারে না...।। 

মনে হয় মৃত্যুর মিছিলে সামিল হয়েই গেলাম,
যেটুকু ছিলো রাগ অভিমান সবটুকু যেও তবে ভুলে,
ভুলে গিয়ে যতো অভিযোগ,অনুযোগ ফেলো না হয় দু ফোঁটা চোখের জ্বল, 
নয়তো দীর্ঘ নিঃশ্বাস...
শেষ বিদায়ের বেলায় দূর থেকেই না হয় শেষ বার বলে দিও ভালোবাসি।

মৃত্যুর আলিঙ্গনে দেহ ত্যাগ করে যদি চলেই যাই,
আমায় তবে অন্তরে রেখো, স্মৃতির কোটরে রেখো ,
মনের পরতে পরতে রেখো।
আর যেটুকু ছিলো মান অভিমান সব ফানুসের মতো আকাশে উড়িয়ে দিও।
ভুলে যেয়ো তিক্ত কথা-
অনুরোধ রইলো অভিমান রেখোনা মনে।
কখনো খুব বেশি মনে পড়ে গেলে না হয় চোখের জ্বল দিয়েই আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো!

কাছে এসে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ তো আর হবে না এ মৃত্যু বেলায়,
হয়তো সুযোগ হবে না কাছে এসে দেখার-
তাই দূর থেকেই ধ্বনি তুলো ভালোবাসি।
মন দিয়েই ছুঁয়ে দিও দূর থেকে,
মন দিয়ে মনকে জড়িয় ভালোবাসায়।
প্রার্থনায় জমিয়ে রেখো আমায় নিয়ম করে।
অভিশাপটা না'হয় ঝেড়ে ফেলো দূরে।

যতো দূরেই যাই না কেনো চলে!
কারণে-অকারণে,নিয়ম-অনিয়মে,
ভুল করে কিংবা সচেতন খেয়ালে-
'ভালোবাসি' শব্দটার মাঝেই আমাকে রাখিও বাঁধি,
ভুলে যেতে যেতেও বেলা শেষে বলে দিও 'তবু ভালোবাসি'!

জীবনের অর্থই হচ্ছে একটি যাত্রা। যে যাত্রাপথে আপনার সাথে হাজার মানুষের দেখা হবে, কথা হবে, আপনার সাথে বন্ধুত্ব হবে আবার তা চোখের পলকে ভেঙে ও হারিয়ে যাবে। জীবনের সবটুকু পথই সুন্দরভাবে কাটবে তা কিন্তু নয়। কারণ আপনি খারাপ সময়ের দেখা না পেলে সুখের মূল্য বুঝবেন না। তেমনি জীবন পথে অতিবাহিত হওয়া কঠিন সময় আপনার সংস্পর্শে না এলেও আপনি ভেতর থেকে কতটা আত্মবিশ্বাসী আর নিজের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন তাও বুঝে উঠতে পারবেন না। কঠিন সময় কখন আসবে তা যেমন কেউ জানেনা তেমনি সেই সময়ে কী করতে হবে সেটাও বলা যায় না। কেউ ভাবেন এই সময় আর শেষ হবার না। নিজের প্রতি নিজের এই কম আত্মবিশ্বাস আপনার জেতা বাজিটাও মাঝে মাঝে হারিয়ে দেয়।

মানুষ একাকী বাঁচতে পারে না। যাবতীয় দুঃখ কষ্ট আর বিপদের দিনে কাছের মানুষ গুলোই তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সবার আগে। মানুষ  একা থাকতে পারে না বলেই একাকিত্ব অনেক সময় অসহনীয় হয়ে ওঠে। সেই একাকিত্ব ঘোঁচাতেই শুধু নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজন কাছে থাকার, পাশে থাকার মতো একজন মানুষ। যে সব কিছুতে সময়ে অসময়ে পাশে থাকবে, বিপদে ভরসা দিবে।

সম্পর্ক জীবনের বৈচিত্র্যময় আনন্দকে চিনতে সাহায্য করে। প্রিয় কারো সঙ্গে  সময় কাটানো নিশ্চয় স্মৃতিকে পরিপূর্ণ করে। কিন্তু তার মানে এই নয়, জীবন  সবার একই রকম কাটবে বা সবসময় একই রকম যাবে। কখনো কখনো একাকীত্ব অপরিহার্য হয়ে  উঠে। এ একাকীত্ব নিজেকে বোঝাপড়ার জন্য খুবই দরকারী। একাকীত্ব মানুষকে এমন  অভিজ্ঞতা দেয়, যা অন্য কোনোভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। একাকীত্ব ভয়ংকর এক অসুখ যা তোমাকে জ্বালাবে পোড়াবে, কিন্তু মারবে না। প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেবে তুমি সবার মতো হতে পারোনি, তোমার মতো কেউ নেই। অদৃশ্য এই অসুখ তোমাকে কুরে কুরে খাবে কিন্তু তোমার শরীরে রক্তে তার কোনো  চিহ্ন থাকবে না। তাই কেউ ধরতে পারবে না তোমার অসুখ, তোমার কষ্ট । তুমি জ্বলে, পুড়ে ছাই হবে। সেই ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির (ছাই থেকে বারবার জন্ম যে পাখি) মতো আবার জন্মাবে। তোমার রক্তক্ষরণ, ধ্বংস হয়ে যাওয়া কেউ বুজবে না, কেউ বুঝবে না তোমার একাকীত্ব। 

অতিরিক্ত মন খারাপ হলে মানুষ একেবারে নীরব নিথর হয়ে যায়। একা থাকতে ভালোবাসে। কারণ তখন তার সমস্যাকে নিজের মত করে কেউ দেখে না কিংবা মূল্যায়ন করে না। তাই মন খারাপের বেলায় একাকীত্বই হয় মানুষের একমাত্র সঙ্গী। একা থাকতে থাকতে একটা সময় একাকীত্বের মাঝে নিজেকে সপে দেয়। সে নিজেও বুঝতে পারে না সে কিভাবে জীবন যাপন করছে। .

নিঃসঙ্গতা বলতে সাধারণত একাকী থাকা বা নির্জনতাকে বুঝালেও মূলত এটি একটি  মানসিক অবস্থা। যখন মানুষ শূন্যতা অনুভব করে এবং সবার কাছ থেকে নিজেকে  গুটিয়ে রাখে তখন নিঃসঙ্গতা দেখা দেয়। নিঃসঙ্গতায় ভোগা মানুষেরা অনেক সময়  অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তাদের মানসিক অবস্থার কারণে তা পারে না। মানসিক অবস্থার পরিবর্তন একদিনে হয় না, একটু একটু করে হোঁচট খেতে খেতে হয়। নিজের মনের সাথে, ইচ্ছের সাথে হেরে যেতে হয়। যদি নিজের কথা একটু বলি তাহলে বলতে হয়- গত ৭০ দিন আমি একা একটা বাসায় ঢাকা অবস্থান করছি। অনেকটা পরিস্থির জন্য। চাইলেই হয়তো এই পরিস্থিতির দোহায় না দিয়ে পরিবারের কাছে চলে যাওয়া যেত। কিন্তু কোন এক কারনে যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি বললে ভুল হবে, ইচ্ছে করেই যাই নি। হোক সেটা পরিবারের প্রতি অভিমান বা অন্য কিছু। আমার কি এই সময় গুলো ভালো কেটেছে? একা একটা বাসায়, বুয়া নেই, কাজের লোক নেই, কথা বলার একজন মানুষ নেই। একটা মানুষের কতোটা নিজের প্রতি অভিমান, অভিযোগ থাকলে এতোটা একা হয়ে যেতে পারে...!! বড্ড ব্যস্ত জীবনে একাকীত্বের চতুর থাবা আজ বারে বারে বিপর্যস্ত করছে। এই একাকীত্ব যাতে না আসে, একে নির্মূল করতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার কতই না চেষ্টা করি। একাকীত্বের মাঝে নিজের সত্ত্বাকে বিলিয়ে দিয়েছিলাম, এতোটাই সপে দিয়েছিলাম যে প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে সময় কাটানো কেমন হয় সেই অনুভূতি গুলোই ভুলে গিয়েছি। ভুলে গিয়েছি শেষ কবে প্রিয় মানুষের সামনে গিয়েছিলাম, শেষ কবে বাড়ি গিয়েছিলাম, ভুলে গিয়েছি শেষ কবে মন থেকে হেসেছিলাম। একাকীত্বের মাঝে ডুবে গিয়ে ভুলে গিয়েছি আমি এখনো জীবিত একজন মানুষ। এই মুহূর্ত গুলো মানুষ মানুষকে খুব ভালোভাবে চিনতে সহায়তা করে। একাকীত্ব মানুষকে খুব ভয়ংকর কিছু অভিজ্ঞতা দেয়...।। জীবন যাত্রার ভিন্নতার সাথে ঘুণপোকার বাসার মতোই আজ অন্যতম অপ্রতিরোধ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে একাকীত্ব। 

আগামিকাল জীবনে কী ঘটতে যাচ্ছে তা কেউই জানি না, হতে পারে এই লিখাটাই শেষ লিখা। তারপরেও এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের কল্পনার শেষ নেই। আর এই কল্পনা মাঝে মাঝে গিয়ে দাঁড়ায় চিন্তা আর জীবনকে কঠিন করার মাধ্যম। 

যোগ্যতা প্রমানের খেলায় আমি ক্লান্ত। ভালো স্কুল, ক্লাসে দশের মধ্যে থাকো, ভালো কলেজে পড়ো, গোল্ডেন পাও, ভালো ভার্সিটি, ভালো সাবজেক্ট, অনার্স তো সবাই পড়ে আরো পড়ো আরো পড়ো, CA-পড়ো ভালো বেতন পাবে,  CMA, CFA, CPA- করতে পারলে তো কথাই নেই, পারলে  Merchandising-এ Join-করো দেখবা টাকা আর টাকা। পড়তে পড়তে  ভাবো বিদেশ যাবে নাকি দেশে সরকারি চাকরি করবে, ভেবে প্রিপারেশন নেয়া শুরু করো। বিদেশ গেলে আরো পড়ো, নতুন জীবন নতুন জায়গা নতুন সংগ্রাম। দেশে থাকলে নিয়োগের গ্যাড়াকলে পৃথিবীর সব বিষয়ে জ্ঞানী হতে হতে বুড়ো হও। একদিন অফিসার হয়ে যাবা মুখে কুলুপ এটে যাবতীয় সব সুবিধা পাবা, বেসরকারি চাকরিতে পয়সা আছে স্বাধীনতা আছে দুই দিন পর পর সিভি রেডি করো কোম্পানী শিফট করো বেতন বাড়াও প্রতিদিন নিজেকে প্রমান করো নাহলে ব্যাকডেটেড হয়ে বাদ পড়ে যাও। এভাবেই ছুটে বেড়াও যোগ্যতার পরিধি আরও বড় করতে, জীবনে বড় কিছু করতে হলে ছুটতে হবে, অনেক ছুটতে হবে। 

জীবনে যে রঙ টুকু দিয়ে আঁকা স্বপ্ন ছিল, যোগ্যতার পিছনে ছুটতে গিয়ে আজ তার সবই ধূলোয় মিশে একাকার। সেই সপ্ন গুলো আর স্বপ্ন হয়ে আমার চোখে আসে না। আলো আঁধারের জীবনে হারিয়ে গেছে জীবনের আলো। সেই যে শুরু এই শহরের সাথে যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া, সেই সাথে হারিয়ে ফেলা নিজের অস্তিত্ব। আস্তে আস্তে ডুবে যাওয়া মিথ্যে হাসির হাঁসি হেসে নিজেকে সজাক রাখা। হারিয়ে গিয়েছে ঠোঁটের কোণে সেই হাসি টা। স্বপ্নের পিছনে ছুটতে গিয়ে নিজেকেই অনেকটা হারিয়ে ফেলেছি। খুব গোপনে আমি দুঃখে ভাসি, ভিতরটা অন্য রকম এক শুন্যতা। মনের কথা, স্বপ্ন, আশা গুলো মনে জমা রয়ে যায়। যে চোখ ছিল সরল-সহজ, সেই চোখের ভাষা হারিয়ে জমেছে কঠিন নীরবতা। হারানোর শেষ সীমানায় এসে আজ বেঁচে থাকার আশাটা হারিয়ে ফেলেছি। সব ছেড়ে লুকাতে ব্যস্ত নিজেকে, চলে যেতে হয় অজানা প্রান্তে।

এমন জীবনের স্বপ্ন তো আমি দেখি নাই মা...! আমি তো একটু আমার মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম। একটু মাটি হাতাবো, একটু গাছে চড়বো, একটু ঘাসে বিশ্রাম নিবো, পুকুরে সাতার কাটবো। আমার তো দু'টো ডাল-ভাতেই হয়ে যায়। এই বার্গার, পাস্তা, এসি, ফ্রিজ, ফ্ল্যাট, গাড়ি, ইট কাঠ পাথরে আমাকে কখন জড়ালে...? এতো মানুষকে আমি কেনো চিনলাম, এতো আঙ্গুল কেনো আমার দিকে...? যেখানে মানুষের চেয়ে মানুষ মানুষের যোগ্যতাকে বেশি ভালোবাসে। 

মৃত্যু কি পারবে আমাকে তোমাদের হাত থেকে মুক্তি দিতে? আমি তোমাদের সাফল্যের হাত থেকে আমার জীবন ভিক্ষা চাই। তোমাদের সমালোচনার হাত থেকে আমার শুদ্ধ নিশ্বাস ভিক্ষা চাই। আমি তোমাদের সবার থেকে দূরে, সবার চিন্তা বাদ দিয়ে একটু বেঁচে থাকতে চাই। এ সমাজ আমাকে বাঁচতে দিবেনা প্রতিজ্ঞা করেছে... আমি তোমাদের সবার মতো বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা করতে পারছিনা।

যোগ্যতা প্রমানের খেলায় আমি ক্লান্ত। এ জীবনের স্বপ্ন আমি কোনদিন দেখিনি, কখনোই না...।

ছোটবেলায় অনেক কিছু করতে চাইতাম, পারলে সব করতে চাইতাম। কেবল স্কুলের কোন বিষয়ে কিছু লিখতে বললেই দুনিয়া উল্টে ফেলতাম। লেখার প্রতি কেমন যেন এক চরম বিতৃষ্ণা ছিল সেসময়। কেন এরকম ছিল সেটা সত্যিই আমার জানা নেই। পেনসিল দিলে কলম দিয়ে লিখতে চাইতাম আর কলম দিলে পেন্সিল দিয়ে। পেন্সিল ধরলেই ইঁদুরের মতো শুরু করতাম কামড়ানো। খাতা ভরে আকাআকি করতাম, তবু লিখব না কিছুতেই।

এখন ভাবলেও হাসি পায়। এখন তো লেখা ছাড়া নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। ডান হাতটা একটু ব্যাথা করলে বা কাটলেও রাগ লাগে যদি ল্যাপটপ এর কীবোর্ড ধরতে না পারি। আমার এই ভার্চুয়াল লিখাবন্ধু আমায় কোনো দিন ধোঁকা দেয় না যে...! যেকোনো হাসি–কান্না, ভাল-খারাপ লাগার অনুভুতি, জীবনে যা কিছুই ঘটুক, সব কিছুতে এই ভার্চুয়াল কাগজ–কলম আমার সব সময়ের সঙ্গী।

কেন লিখি...!! প্রশ্নটা একটু বেশ কঠিন আমার কাছে। যেমন কেউ যখন  জিজ্ঞেস করলো- কেমন আছেন...? এর উত্তর দায়সারা ভাবে দিলেও সত্যিকার অর্থে কি দিতে পারি...? আসলেই পারা যায় না। প্রতিদিন আমরা এরকম প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছি আর নিজেকে প্রশ্ন করছি। এমন তাগিদ বোধ থেকে বলা খুব মুশকিল কেন লিখি। নিজেকে প্রশ্ন করার মতো বলি- "লিখি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য, জীবনের প্রতিটা ধাপ-সময় কোন এক জায়গায় লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য, জীবনকে কিছুটা বোঝার জন্য, জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি গুলো পাঠককে বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে মিলিয়ে নেয়া। লেখাকে আনন্দ-দুঃখ সমান ভাবে উপলব্ধি করি। আমার অনুভূতি প্রকাশ না করতে পারলে কষ্ট পাই, সেই প্রকাশের মাধ্যম টাই এই আবোল-তাবোল, অগোছালো কিছু লেখা-লেখি। খুব প্রিয় মানুষটির সাথেও হয়তো মন নিংড়ানো সব কথা বলা যায় না। কথা বলার সময় নিজের সবটা সঠিক ভাবে প্রকাশ করতে যতোটা না কষ্ট হয় তারচেয়ে বেশি কষ্ট হয় পরবর্তীতে কথা গুলোর ভুল ব্যাখ্যা শুনে। কারো কাছে নিজের খারাপ লাগার সময়টা শেয়ার করে পরবর্তীতে সেই খারাপ সময়ের ভুল ব্যাখ্যার সাথে তীর ছোড়া কথা বেশি কষ্ট দেয়, স্তব্ধ করে দেয়। এটা ভাবতে বাধ্য করে-"নিজের কথা গুলোকে, নিজের মনের ভাবটাকে নিজের মাঝে ধামা চাপা দিলেই হয়তো ভালো হতো।"  অর্জিত অভিজ্ঞতা আর অপারগতা এই লেখার মধ্য দিয়েই প্রকাশ করি।

আগে প্রতিদিনের কোনো একটা সময় বের করে ফেলতাম কাজের ফাঁকে। বর্তমান ব্যস্ততা আমাকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, চাইলেও মনমতো পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পড়তে পারি না, মনের ভাবটা প্রকাশ করতে পারি না। লিখতে পারি না অনেক কিছুই। ব্যক্তিগত লাইব্রেরির দিকে তাকালে শুধু আক্ষেপ হয়, হায়, কত পড়া বাকি এখনও!

‘মানুষের চেয়ে কাগজের, লেখার ধৈর্য বেশি’। এর সঙ্গে নিজের কথা যোগ করে বলি, কাগজ - লেখাকে হয়তো মানুষের চেয়ে বিশ্বাসও করা যায় বেশি।


জানি,পৃথিবীর সব কোলাহল ছেড়ে-
একদিন চলেই যাবো দূর বহুদূরে,
ফিরে আর আসা হবে না,
প্রাণ খুলে আর হাসা হবে না,
নিঃশেষ হয়ে যাবে এই অস্তিত্ব চিরতরে।
একদিন চলেই যাবো সবকিছু ছেড়ে।

কেউ যাবে না আমার সাথে-
আমি একাই চলে যাবো একদিন,
তুমি সমস্ত পৃথিবী জুড়েও খুঁজে পাবে না,
হয়তো ভুলে যাবে কয়েক মিনিট বা কিছু দিন পর। 
আমি রেখে যাবো কিছু স্মৃতি তোমার জন্য-
ভাবতে পারো আমার অসমাপ্ত ভালোবাসা এটা,
আমি থাকবো না তবুও-
আমার স্পর্শ টুকু অনুভব করে নিও , 
জানি না সেদিনও কি আমার এই ভালোবাসা টুকু-
অবহেলিত থাকবে তোমার কাছে ...!!?? 

জানি, সেদিন আমায় কেউ রাখবে না মনে-
ভুলে যাবে আমার কথা খুব গোপণে।
দূর হতে দেখবো সেদিন অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে
বর্ণিল স্মৃতি গুলো গেছে অতীতে হারিয়ে।
ব্যস্তময় নির্মম বাস্তবতার ভীড়ে
জানি, হারিয়ে যাবো আমি চিরতরে।

হয়তো, থাকবো না সেদিন প্রিয় কোন বন্ধুদের আড্ডায়
কিংবা স্বজনদের পারিবারিক আলাপচারিতায়,
বা তোমার আনমনে ভাবনায়-
হয়তো, আমার ছবি দেয়ালের কোণে পাবে শোভা,
বছর পার হতেই বড়জোর একটা স্মরণ সভা।
তারপর, আমি আর নেই তোমাদের ভীড়ে
হারিয়ে যাবো মন থেকে চিরতরে।

অধরা স্বপ্নটা বুকে নিয়েই-
আমি হারিয়ে যাবো চিরতরে...।। 

MARI themes

Powered by Blogger.